গণবাণী ডট কম::
আপন ভাই বোনদের বঞ্চিত করার জন্য জাল দলিল তৈরী করে ক্ষতিপুরণের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করার চেষ্টাকালে দু্ই সহোদর গাজীপুর ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার হাতে ধরা পড়েছে। পরে তাদের নিয়মিত মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতার দুই সহোদর হলো, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার টানসূত্রাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে মোঃ ইউসুফ আলী ও আলী হোসেন ওরফে কাজল আহমেদ।
গাজীপুর ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা থান্ডার কামরুজ্জামান জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নাম-কালিয়াকৈর ৪০০/২৩০/১৩২ কেভি গ্রীড উপকেন্দ্র সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এলএ কেস নং ০৭/১৯-২০। উক্ত প্রকল্পে মৃত আব্দুল মালেকের কালিয়াকৈর উপজেলাধীন টানসূত্রাপুর মৌজার এসএ ১৫২, ১৫৩ খতিয়ান এসএ ১০৩ দাগ আরএস ৮৪, ১৬৯ খতিয়ান এবং আরএস ২২৯ নং দাগে ৪০ শতক বোর শ্রেণীর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। মালেকেরে মোট ৫ ছেলে ও ৪ মেয়ে রয়েছে। এ জমির ক্ষতিপুরণ বাবদ ৫১ লাখ টাকা পাওয়ার কথা। উক্ত টাকায় তাদের অপর ভাই বোনও অংশীদার। কিন্তু গ্রেফতার আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা জমির মালিক সেজে জাল দলিল তৈরী করে চলতি বছরের ১১ আগস্ট অফিস চলাকালীন সময়ে যৌথ স্বাক্ষরে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেন।
তিনি আরো জানান, তাদের আবেদন নিয়ে কাজ করার সময় তাদের দাখিলকৃত দলিলাদি সন্দেহজনক/ক্রুটিপূর্ণ মনে হওয়ায় দলিলাদি যাচাই করার জন্য তিনি নিজে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে কাগজ যাচাই করেন। সেখানে গিয়ে বালাম বহিতে দেখা যায় দাখিলকৃত দলিলের সাথে জেলা রেজিস্ট্রারের বালাম বহির সাথে অসামঞ্জস্যতা আছে। দাখিলকৃত দলিলের মধ্যে দলিল নং ৩৮৫৫, তারিখ ০৭/০৭/৮৫ এ দেখা যায়, দাতা-দেবেন্দ্র নমদাস পিতামৃত-বৃন্দাবন নমদাস, গ্রহীতা-শ্রী নিমাই চন্দ্র কর্ম্মকার, শ্রী গকুল চন্দ্র কর্ম্মকার, শ্রী গুরুদাস চন্দ্র কর্ম্মকার, সর্বপিতা-শ্রী ব্রজবাসী কর্ম্মকার, সুনীল চন্দ্র কর্ম্মকার পিতা-নারায়ন চন্দ্র কর্ম্মকার, জমির পরিমান ১৪ শতাংশ কিন্তু জেলা রেজিস্ট্রারের বালাম বহিতে দেখা যায়,দাতা-দেবেন্দ্র নমদাস পিতামৃত-বৃন্দাবন নমদাস, গ্রহীতা-শ্রী নিমাই চন্দ্র কর্ম্মকার, শ্রী গকুল চন্দ্র কর্ম্মকার, শ্রী গুরুদাস চন্দ্র কর্ম্মকার, সর্বপিতা-শ্রী ব্রজবাসী কর্ম্মকার এখানে জমির পরিমান ০৭ শতাংশ এবং পরবর্তীতে তারা অন্য দলিলের মাধ্যমে ১৪ শতাংশ জমি হস্তান্তর করেন যা মালিকানা স্বত্ব থেকেও বেশি এবং মোঃ ইউসুফ আলী দালিখকৃত দলিল নং ৫০৫, তারিখ-১৮/০১/৮৩ তে দেখা যায়, দলিল দাতা-শ্রী হরিমোহন মন্ডল, শ্রী ঝরু মন্ডল, শ্রী নাগর মন্ডল, শ্রী ক্ষিরোদ মন্ডল পিতামৃত জলধর মন্ডল, গ্রহীতা-মোঃ ইউসুফ আলী, পিতা মৃত আব্দুল মালেক, সাং-টানসূত্রাপুর, থানা-কালিয়াকৈর, গাজীপুর কিন্তু জেলা রেজিস্ট্রারের বালাম বহিতে দেখা যায়, গ্রহীতা মোঃ আব্দুল মালেক অর্থ্যাৎ নাম ঘষামাজার মাধ্যমে পরিবর্তন করে বাবার পরিবর্তে নিজেরা মালিক হয়েছেন।
গত বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উভয়ে অফিস চলাকালীন সময়ে জমির ক্ষতিপূরণের চেক গ্রহণের জন্য উক্ত অফিসে উপস্থিত হয়। তখন আবেদনকারীর নিকট হতে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কোন সদুত্তোর পাওয়া যায়নি। জিগ্যাসাবাদকালে মোঃ ইউসুফ আলী বলেন, ৭/৮ মাস আগে একজন মোক্তার এর সহযোগিতায় তিনি বেআইনি পরিবর্তন করেন। এক্ষেত্রে তিনি সহযোগিতা নিয়েছেন তার আরেক ভাই আলী হোসেন ওরফে কাজল আহমেদের। তিনি আরো স্বীকার করেন, তারা অন্য ভাইবোনদের বঞ্চিত করার জন্য এ কাজ করেছেন।
পরে জালিয়াতির বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়ে জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামকে জানানো হয়। সব শুনে তিনি আসামীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করে পুলিশে সোপর্দ করার নির্দেশ দেন। জেলো প্রশাসকনের নির্দেশে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অফিস সহকারী কাজী মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ আসামীদ্বয়কে সদর মেট্রো কোর্টে হাজির করলে আদালত তাদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গাজীপুর মেট্রো সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সৈয়দ রাফিউল করিম জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একদিনের রিমান্ড শেষে আসামীদের আদালতের মাধ্যমে শনিবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।