গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর বাসন সড়ক ও ভোগড়া এলাকায় একই মালিকানাধীন দুটি তৈরী পোশাক কারখানা কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শ্রমিকদের এক মাসের বেতন বকেয়া রেখে রোববার (১০ অক্টোবর) সকালে লে অফ (বন্ধ) ঘোষণা করার পর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের আন্দোলনের মূখে সন্ধ্যায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা প্রত্যহার করে পুনরায় চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা দিয়েছে মালিক পক্ষ। ফলে চাকরি হারিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শংকায় মহাসড়কে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা হাসিমুখে ঘরে ফিরে গেছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী জানান, গাজীপুর মহানগরীর বাসন সড়ক ও ভোগড়া এলাকায় একই মালিকানাধীন দুটি তৈরী পোশাক কারখানা কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শ্রমিকদের এক মাসের বেতন বকেয়া রেখে রোববার (১০ অক্টোবর) সকালে লে অফ (বন্ধ) ঘোষণা করার পর হয়। এর প্রতিবাদে কারখানা দুটির সহস্রাধিক শ্রমিক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ৪ ঘন্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ চলাকালে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের ফলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে মহাসড়কের উভয়পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হলে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। পরে বেলা ১২টার দিকে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে বুঝিয়ে আলোচনার টেবিলে আনা হয়। বিকাল ৪টার দিকে আলোচনা শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সফল পরিনতি পায়। গাজীপুর জেলা প্রশাসন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, শিল্প পুলিশ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর, বিজিএমইএ এবং ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মালিক পক্ষের সাথে সমঝোতা বৈঠকের পর করাখনা বন্ধ করার ঘোষণা প্রত্যাহার করে পুনরায় কারখানা চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত ১১ অক্টোবর থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করাসহ ৪ দফা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এর আগে একরাতের ব্যবধানে চাকরি হারানো রহিমা, মাজেদা বেগমসহ অনেক শ্রমিক জানান, গাজীপুর মহানগরীর বাসন এলাকার ইন্টারলিংক অ্যাপারেলস লিমিটেডসহ দুটি কারখানার শ্রমিকরা গত শনিবার কোন কিছু না জেনেই অন্যান্য দিনের মতো কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে যান। পরের দিন (গতকাল) রোববার তাদের গেল সেপ্টেম্বর মাসের বেতন পরিশোধের কথা। রোববার সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা যথারীতি কাজে যোগদিতে এসে দেখে কারখানা বন্ধ। এসময় তারা কারখানার সামনে প্রধান ফটকে কারখানা বন্ধের (লে-অফ) ঘোষণার লিগ্যাল নোটিশ দেখতে পান। এতে কারখানার সহস্রাধিক শ্রমিক উত্তেজিত ও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
একই সময়ে মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় একই মালিকানাধীন অপর একটি কারখানার শ্রমিকরাও সকালে কাজে যোগদিতে এসে তাদের কারখানার প্রধান ফটকের কারখানা লে-অফ ঘোষণা নোটিশ দেখতে পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের ফলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় উভয়পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরী হয়। পরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে প্রায় ৪ ঘন্টা পর শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে দুপুর ১২টার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
এ ব্যাপারে রোববার সন্ধ্যা নাগাদ কারখানা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের লে অফ নোটিশে কারখানা বন্ধের কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছে, মহামারি করোনার কারণে তাদের কারখানা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কারখানাটি চালানোর মতো তাদের সামর্থ্য নেই, তাই আইন মোতাবেক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও মিডিয়া) মো: জাকির হোসেন জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারখানার মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী আরো জানান, শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে আনার পর বিকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, শিল্প পুলিশ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর, বিজিএমইএ এবং ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মালিক পক্ষের সাথে সমঝোতা বৈঠক হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়। সমঝেতা অনুযায়ী গত ৯ অক্টোবর ঘোষিত লে অফ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১১ অক্টোবর থেকে কারখানা পুনরায় চালু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত পূর্ণ বেতনে সাধারণ ছুটি থাকবে। আগামী ১৯ অক্টোবর সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণ বেতন প্রদান করা হবে এবং আগামী মাস থেকে শ্রম আইন অনুযায়ী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ণ বেতন পরিশোধ করা হবে।