গণবাণী ডট কম:
রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের সকালে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে নানা আয়োজনে পালিত হলো নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৩ তম জন্মদিন। হিমুর স্রষ্টার জন্মদিনে বরাবরের মতোই রাত ১২টা ১ মিনিটে নুহা্যশ পল্লীতে মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে জন্মদিনের আয়োজন শুরু হয়েছে। শনিবার সকালে শত শত ভক্ত ও হিমুর উপস্থিতিতে নন্দিত এই লেখকের কবর জিয়ারত, সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা, কেক কাটাসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে লেখককে স্মরণ করল তাঁর পরিবার, স্বজন, নুহাপল্লীর স্টাফ ও ভক্ত পাঠকরা। এসব আয়োজনে প্রাণ ফিরে পায় নুহাশপল্লী। তারপরেও এক সীমাহীন শুন্যতা, শুধু নেই সকলের প্রিয় স্যার, পাঠক নন্দিত সেই হুমমায়ূন আহমেদ।
গাজীপুর সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে পিরুজালী এলাকায় অবস্থিত নুহাশপল্লীতে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ ভক্তরা। কবরে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিকসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। হুমায়ূন আহমেদের ৭৩ তম জন্মদিনে রাতে লেখকের সমাধিতে ১০৭৩টি মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে লেখকের পরিবার, নুহাশপল্লীর স্টাফ, ভক্ত পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিতিতে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে লেখকের ম্যুরালের সামনে দুই ছেলেকে নিয়ে কেক কাটেন শাওন। এছাড়াও সকাল থেকেই ভক্তরা দুর-দূরান্ত থেকে গিয়ে প্রিয় লেখকের কবরে শ্রদ্ধা জানান, তারা নুহাশ পল্লী ঘুরে দেখেন। এসময় হুমায়ূন ভক্ত পাঠকরা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় আজীবন লেখককে স্মরণ করে যাবেন বলে জানান।
নুহাশপল্লীর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বরাবরের মতো নানা আনুষ্ঠানিকতায় লেখককে স্মরণ করার কথা জানান নুহাশপল্লীর এই কর্মকর্তা। বুলবুল জানান, ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তার প্রথম নাম ছিল শামসুর রহমান পরে তার নাম পাল্টে হুমায়ুন আহমেদ রাখা হয়। তার ডাক নাম ছিল কাজল। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি আমেরিকার একটি হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে তাকে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীর লিচুগাছ তলায় দাফন করা হয়।
প্রয়াত এ কথা সাহিত্যিকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন লেখকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি নেই জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে যা খুশি তাই করা যাবে না। লেখকের সাহিত্যকর্ম নিয়ে শুদ্ধতম চর্চাটা যেন অব্যাহত থাকে। এসময় তিনি হুমায়ূন আহমেদকে বাংলাদেশের সম্পদ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যারা হুমায়ূনকে ভালোবাসেন, তাদের অনেকেই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কাজ করতে চান। তবে একটা অনুরোধ, তাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তা কেউ করবেন না। গত ১০ বছরে হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে যেনতেনভাবে কাজ করার চেষ্টা হয়েছে। হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে ঠাঁস করে একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলা, একটা বই লিখে ফেলার বিষয়গুলো আমার খুব খারাপ লেগেছে।’
শাওন সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে অনেকে ভালোভাবে গবেষণা করছেন, পিএইচডি করছেন। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে পিএইচডি হচ্ছে, অনেকেই তাকে নিয়ে চর্চা করছেন। সেই চর্চাটা বাড়ুক, ছাত্ররা হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে জানুক। তাকে নিয়ে ভুল কোনও চর্চা না হউক, এটা আমার একটা বড় প্রত্যাশা। কারণ হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সম্পদ, সে সম্পদ নিয়ে ভাল মতো চর্চা হউক।’
শাওন আরো বলেন, যারা হুমায়ুন আহমেদকে ভালবাসেন, যারা হুমায়ুন আহমেদের পাঠক, হুমায়ুন আহমেদের নাটকের-সিনেমার দর্শক, হুমায়ুন আহমেদের গানগুলো যারা ভালবাসেন, তারা হুমায়ুন আহমেদকে আজীবন ভালবাসেন এবং ভালবেসে যাবেন। তারাই পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হুমায়ূন আহমেদকে তুলে দেবেন, হুমায়ূন আহমেদের লেখা, সৃষ্টিকর্ম তুলে দেবেন। এটাই আমার এবং আমাদের পরিবারের আজীবনের প্রাপ্তি হবে।’
বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন।