নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর):
ট্রেডিং কর্পোরেশন অববাংলাদেশ (টিসিবির) পণ্য খোলা মাঠে স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে বিক্রি না করে অধিক মুনাফার আশায় অন্যত্র বিক্রি করেছেন ডিলার আমজাদ হোসেন। কালো বাজারে বিক্রির অপরাধে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে ১০ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.কে.এম গোলাম মোর্শেদ খান।
গত ৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিক্রয় চালান ও সরবরাহ আদেশক্রমে ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয় হতে ১০০ কেজি চিনি, ৫০০ কেজি ডাল, ৩০০ কেজি পিয়াজ ও ৭০০ লিটার তেল ক্রয় করে নিয়ে আসেন। ওই দিন কাপাসিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের সাফাইশ্রী গ্রাম এলাকার বিক্রির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে বলা হয়। কিন্তু সে আদেশ অমান্য করে উপজেলা দুর্গাপুর ইউনিয়নের নিজের বাড়ির এলাকায় কাল বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে ৩০৬ লিটার তেল ও ৩০০ কেজি ডাল মজুদ করে রাখে।
এলাকাবাসী ফাইজুলাহ জানান, এর আগেও তিনি টিসিবির পণ্য সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি না করে অন্যত্র বিক্রি করছেন। এতে করে সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। টিসিবির পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষ-এ সকল পণ্য কিনতে গিয়ে নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে টিসিবির পণ্য ক্রয় করতে না পেরে ফিরে গেছেন অনেকেই। তারা একটি সিন্ডিকেট চক্র তৈরি করে টিসিবির পণ্য কালো বাজারে বিক্রির করছিল।
জানা যায়, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করতে সরকার স্বল্পমূল্যে জনগণের দোরগোড়ায় নিত্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টি.সি.বি) এর মাধ্যমে খোলা বাজারে বিক্রির উদ্যোগ নিলেও কাপাসিয়ার জনসাধারণ দীর্ঘ দিন যাবৎ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। কাপাসিয়ায় টিসিবির তালিকাভুক্ত তিন জন ডিলার রয়েছে। তাদের মধ্যে ‘জোনাকী মাল্টি পারপাসের’ স্বত্তাধিকারী মেহেদী হাসান লিটন দীর্ঘদিন যাবৎ টিসিবি থেকে পণ্য গ্রহণ করেন না। এ সময় ‘মেসার্স আমজাদ ট্রেডার্সের’ স্বত্তাধিকারী মোঃ আমজাদ হোসেন এবং তার ভাই ‘মেসার্স মাহবুব ট্রেডার্সের’ স্বত্তাধিকারী মাহবুব হোসেন প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে প্রায়ই তাদের পছন্দের জায়গায় টিসিবির পণ্য বিক্রি করেন এবং অধিকাংশ পণ্যই কালো বাজারে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘মেসার্স আমজাদ ট্রেডার্সের’ স্বত্তাধিকারী মোঃ আমজাদ হোসেনকে উপজেলা সংলগ্ন সাফাইশ্রী এলাকায় পণ্য বিক্রির নির্দেশনা প্রদান করা হলেও তিনি প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে রায়নন্দা এলাকায় একটি পিকআপ রেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে চালান ফর্মে স্বাক্ষর নিতে আসেন। বিষয়টি জানতে পেরে আশপাশের লোকজন রায়নন্দা এলাকায় গিয়ে পিকআপে খুব অল্প পরিমাণ পণ্য দেখতে পান। পরে উপস্থিত লোকজন চাপ প্রয়োগ করে পিকআপটি উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিয়ে আসেন। পরে রাতের বেলা আমজাদ হোসেন তার লোক দিয়ে দুটি অটোরিকশা বোঝাই করে উপজেলার তারাগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে তিনশত কেজি মশুর ডাল ও তিনশত ছয় লিটার সয়াবিন তেল নিয়ে আসেন। পরে পলাতক আমজাদ হোসেনকে রাত এগারটার সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে হাজির করা হলে তিনি অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.কে.এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, বরাদ্দকৃত দ্রব্য বিক্রয় অনিয়ম ও কালোবাজারে বিক্রি করার দায়ে আমজাদ ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী আমজাদ হোসেনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে অনিয়মের দায়ে তার ডিলারশিপ বাতিল হয়েছে। জব্দকৃত পণ্য জনসাধারণের জন্য খোলাবাজারে বিক্রি করা হবে এবং সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। একই সাথে অন্যান্য ডিলারদের টিসিবির পণ্য বিক্রির ব্যাপারে আরো আন্তরিক হতে হবে।