গণবাণী ডট কম:
রাজধানী লাগোয়া শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দ্রুত সংক্রমণের হার বাড়ার কারণে আজ বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গাজীপুর জেলাকে উচ্চ ঝুঁকির এলাকা (রেড জোন) হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্ত জেলায় সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরসহ ১২ জেলাকে উচ্চ ঝুঁকির এলাকা (রেড জোন) হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে দেশের জেলাগুলোকে তারা উচ্চ, মাঝারি ও স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ভাগ করে যথাক্রমে রেড বা লাল, ইয়েলো বা হলুদ ও গ্রিন বা সবুজ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তাদের তথ্য মতে, করোনার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার যে সব জেলায় ২০ শতাংশের বেশি হলে সেগুলো লাল, শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি হলে অধিকতর গাঢ় লাল রঙে চিহ্নিত করছে অধিদপ্তর। শনাক্তের হার বিবেচনায় দেশের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে ১২ জেলা। উচ্চ ঝুঁকির ১২ জেলা হচ্ছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, লালমনিরহাট, গাজীপুর, পঞ্চগড় এবং খাগড়াছড়ি।
উচ্চ ঝুকির জেলা গাজীপুরে করোনায় গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ হাজার ৪২২জন। অপরদিকে, বুধবার মারা গেছেন একজন। এই নিয়ে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৫০৬ জনে। বুধবার দুপুরে গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস এই তথ্য দেয়। গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় করোনার শনাক্তের জন্য ২২৮স জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। প্রাপ্ততথ্য মতে, মঙ্গলবার ২৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সেদিন শনোক্তের হার ছিল ২৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।
অর্থাৎ, জেলা সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গাজীপুর জেলাকে সংক্রমণের উচ্চ ঝুকির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় মহানগরীর কয়েকটি হোটেল ও গণ পরিবহণে সরেজমিনে দেখা গেল কোথায়ও স্বাস্থ্যবিধি বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ দফা নির্দেশনা মানা হচ্ছে। হোটেল গুলোতে অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকার কথা থাকলেও কয়েকটি হোটেল ঘুরে একটিতেও কোন আসন ফাঁকা দেখা যায়নি। হোটেলের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও মাস্ক পড়ে না। মহানগরীর রাজবাড়ী সড়কের কয়েকটি হোটেলে গিয়ে দেখা গেল একটি হোটেলের ম্যানেজারের মুখে মাস্ক নেই। জানতে চাইলে হাসতে হাসতে হোটেল ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম মাস্ক আছে বলে অনেক খুঁজেও মাস্ক বের করতে পারেননি।
হোটেলের কাস্টমার নিলের পাড়ার বাসিন্দা ফয়সালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেউ কি টিকা কার্ড আছে কি না জানতে চেয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, না কেউ কোন প্রশ্ন করেনি।
সরকারী নির্দেশনার বিষয়ে হোটেল ম্যানেজারকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা কোন নির্দেশনা পাইনি। টিকার সনদ দেখতে চাইলে কাস্টমার রাগ করে।
গাজীপুর সিভিল সার্জনের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘন্টায় গাজীপুর সদরে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫ জন। এ নিয়ে গাজীপুর সদরে মোট আক্রান্ত ১৫ হাজার ৪৭৫জন, কালীগঞ্জে নতুন আক্রান্ত ৮ জনসহ মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৮৫২ জন, কাপাসিয়ায় নতুন ৫ জনসহ কাপাসিয়ায় মোট আক্রান্ত ২ হাজার ৪৭৮, কালিয়াকৈরে নতুন ১ জনসহ মোট আক্রান্ত ২ হাজার ৩৭৯, গত ২৪ ঘন্টায় শ্রীপুরে নতুন কেউ আক্রান্ত হয়নি। শ্রীপুরে মোট আক্রান্ত ৩ হাজার ২৩৮ জন।
এসব বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, সরকারের ১১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন কঠোর ভুমিকা পালন করবে। ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে জন সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জন সমাগম হয় এমন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জেলায় করোনার সংক্রমণ রোধকল্পে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।