গণবাণী ডট কম:
মাত্র ১৫০ টাকা খরচ করে পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো গাজীপুরের ৯৪ যুবক-যুব মহিলার। কোন রকম ঘুষ-তদবির ছাড়াই সরকারি ফি দিয়ে বিনে পয়সায় পুলিশের কনস্টেবল হিসাবে চাকরি হয়েছে তাদের।েআর এতে মূল্যায়ন হয়েছে মেধা ও যোগ্যতার। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে হতদরিদ্র পিতা-মাতার।
আর এর মাধ্যমে কথা রেখেছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তিনি ঘোষনা দিয়েছিলেন পুলিশে চাকরি পেতে কোনো ঘুষ তদবির লাগবে না। টেলিটকের মাধ্যমে ৩০ টাকা দিয়ে আবেদন করে শারিরীক পরীক্ষায় বাছাইয়ের পর ১২০টা টাকা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করেই পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া যাবে। বাস্তবে সেই ঘোষণার প্রমাণ দেখা গেলো গতকাল বুধবার গাজীপুর পুলিশ লাইন্সে।
বুধবার দুপুরে গাজীপুর পুলিশ লাইনে চাকরি প্রত্যাশিদের উপস্থিতে ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা পুলিশ সুপার এস এম সফিউল্লাহ। এসময় সকল পরিক্ষায় উত্তীর্ণ ১৪জন নারী ও ৮০ জন পুরুষকে চুড়ান্তভাবে বাছাই করা হয়। এসময় বিনে পয়সায় কোন রকম হয়রানি, তদবির ছাড়াই চাকরি পেয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেন চাকরি প্রাপ্তরা।
ফল ঘোষণার পর খুশিতে কেঁদে ফেললেন অনেকে। গাজীপুরে এবার বিনা পয়সায় চাকরি পেলেন কৃষক, পোশাক শ্রমিক, চা বিক্রেতার সন্তানেরাও। মেধার ভিত্তিতে বিনা পয়সায় সোনার হরিণ খ্যাত এ চাকরি পেয়ে পুলিশ সুপারকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অধিকাংশ হতদরিদ্র পরিবারের উত্তীর্ণরা।
গাজীপুর মহানগরীর উত্তর সালনা এলাকার মৃত আয়নাল হকের ছেলে মিরাজ হোসেন অভি ঘুষ ছাড়াই চাকরি পেয়ে খুব খুশি। তিনি জানালেন, তার বাবা চায়ের দোকানদার ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি ও তার এক বড়ভাই উক্ত চা দোকানের আয় দিয়ে সংসার চালাতেন। যখন লোক মুখে শুনতাম চাকরি পেতে লাখ লাখ টাকা ঘুষ লাগে, তখন সে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়তাম। টাকা খরচ করাও তার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। বিনা পয়সায় আমার চাকরি হয়েছে। টাকা ছাড়া চাকরি হয় এটি আজই দেখলাম। তিনি বলেন, চাকরী জীবনে সততা নিয়ে কাজ করব। তিনিস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানান।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকার মেয়ে শাবনুর। তিনিও মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন। তিনি জানালেন, মাত্র দুই বছর বয়সে তার পিতা মারা যায়। তারপর তার মা সুমী আক্তার স্থানীয় পোশাক কারখানায় কাজ করে তাকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেছেন। বিনে পয়সায় চাকরি পাওয়ায় তিনি ও তার মা ভীষণ খুশি। তিনি বলেন, আমি সততা ও দেশপ্রেমের সাথে চাকরী করবো। চাকরী হওয়াতে আমি আমার মাকে দেখাশুনা করতে পারব, তার সেবা করতে পারব-এটা আমার খুব আনন্দের। এজন্য তিনি পুলিশ সুপারসহ সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এমনিভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শ্রাবনী, আশিকুর রহমান, মাহিন খানসহ অনেকে।
ফলাফল ঘোষণার পর পুলিশ সুপার জানান, সেবার ব্রত নিয়ে দেশের জন্য কাজ করবে নতুন নিয়োগ প্রাপ্তরা। সুষ্ঠ জাতি গঠন, সন্ত্রাস নির্মুল, স্বাধীনতার স্বপক্ষে পুলিশ সদস্যরা ভূমিকা রাখবে। জেলা পুলিশের এ কর্মকর্তা দাবী করেন শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে নিয়োগ পক্রিয়া সম্পর্ন করা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে ৬৫৮ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। পরে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ২৪৬ জন প্রার্থী। তাদের গাজীপুর জেলায় নিয়োগযোগ্য শূন্য পদের বিপরীতে সরকার কর্তৃক জারিকৃত বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে মেধা অনুযায়ী ৮০ জন পুরুষ ও ১৪ জন নারীকে নির্বাচিত করা হয়।