গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) দুই মেয়েকে বিদ্যালয় থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি চালক হিরা মিয়াকে মহানগর পুলিশের দুই ট্রাফিক পুলিশ মারধর করেছে। এ সময় গাড়ীতে থাকা জেলা প্রশাসকের দুই মেয়ে ভয় ও আতংকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। রোববার (১০ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে মহানগরীর রাণী বিলাসমনি বালক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মোড়ে এই মারধরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর দুপুর ১টার দিকে পরে জিএমপি কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে। প্রত্যাহার হওয়া ওই দুই ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল হলেন ইউসুফ আলী ও নুর মোহাম্মদ। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর জেলা প্রশাসনের স্টিকার ও ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডযুক্ত সরকারি গাড়িতে ডিসির দুই মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে বাসায় ফিরছিলেন চালক হিরা মিয়া। পথে মহানগরীর রাণী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মোড়ে এসে পৌঁছালে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এসময় চালক হিরা মিয়া পুলিশ সদস্যকে জানান, গাড়িতে জেলা প্রশাসকের দুই মেয়ে রয়েছেন। পরিচয় বলার পরেই এক ট্রাফিক পুলিশ বলে ওঠেন, ‘ডিসির গাড়ি হয়েছে তো কী হয়েছে? আপনাকে রাস্তা ঘুরেই যেতে হবে। আমরা রাস্তায় রোদে দাঁড়িয়ে ডিউটি করি আর আপনারা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে যাবেন এটা হবে না’।
এসময় চালক হিরা মিয়া বলেন, আপনাদের কাজই হচ্ছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করা। এ কথা বলার পর এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ডিসির গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। এসময় চালক হিরা মিয়া প্রতিবাদ করলে পুলিশ সদস্য কনস্টেবল ইউসুফ ও নুর মোহাম্মদ লাঠি দিয়ে তাকেও আঘাত করেন এবং গাড়ী থেকে তাকে টেনে-হিঁচড়ে নামাতে চেষ্টা করেন। পরে চালক গাড়ি ঘুরিয়ে বিকল্প পথে ডিসির বাসভবনে পৌছান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, গাড়িচালক হিরা মিয়াকে মারধরের সময় ডিসির দুই শিশুকন্যা বারবার পুলিশকে মারধর না করার জন্য অনুরোধ করলেও তারা শোনেননি। এসময় তারা ভয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে।
এদিকে, ঘটনার সময় জেলা প্রশাসক জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় ছিলেন। গাড়িচালককে পুলিশের মারধরের ঘটনার খবর পেয়ে তিনি দ্রুত বাসায় যান এবং সন্তানদের শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেন।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সকল কর্মচারী ক্ষুব্ধ হয়ে শিববাড়ী-রাজবাড়ী সড়কে নেমে আসেন। তারা রাজবাড়ি সড়ক অবরোধ করে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবীতে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় আধাঘণ্টাব্যাপী ওই সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে কর্মচারীদের বুঝিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অভ্যন্তরে নিয়ে যান।
পরে ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুনও জেলা প্রশাসকের বাসভবনে গিয়ে এ ঘটনায় জড়িত দুই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসককে আশ্বস্ত করেন।
পরে জিএমপির উপ-কমিশনার জাকির হাসান ও ইলতুৎমিশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে দেখা করেন। জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, এ ঘটনায় তিনি হতভম্ব হয়ে গেছেন। পুলিশ সদস্যকে জেলা প্রশাসকের গাড়ি এবং তাতে তার দুই কন্যা আছে পরিচয় দেওয়ার পরও চালককে মারধর করা দু;খজনক।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গাড়ি চালকের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের ঘটে যাওয়া ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। এরই মধ্যে অভিযুক্ত দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, ঘটনা তদন্তের জন্য ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপরসদস্যরা হলো এডিসি (অপরাধ ও অপারেশন) ও এসি (ট্রাফিক-উত্তর)। তাদের পরবর্তী ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ঘটনায় জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় এবং নিন্দা প্রকাশ করেন।