গণবাণী ডট কম:
বর্ষার শুরুতে আজ শুক্রবার টানা বর্ষণে গাজীপুর মহানগরীর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বেশ কিছু অংশসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নগরবাসী ও মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহণের যাত্রীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রাজধানী লাগোয়া শিল্প নগরী গাজীপুর বন্যা মুক্ত জেলা। কিন্তু বর্ষা এলেই দেখা যায় নগরীর প্রকৃত চিত্র। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে নগরীর বিভিন্ন এলাকা সামান্য বৃস্টি হলেই পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গড়ে ওঠা অপরিকল্পিত স্থাপনা, বাসা-বাড়ী, শিল্প কল কারখানার কারণে এ নগরীরর বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি কোথাও। অনেক এলাকায় পয়:নিস্কাশনের কোন ড্রেন নেই। কিছু এলাকায় সড়ক-মহাসড়কের ফুটপাথের নীচ দিয়ে ড্রেন থাকলেও বেশিরভাগ এলাকায় রাস্তা-ই ড্রেন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে এসব এলাকায় নগরবাসীকে বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় শুক্রবার থেকে পানি নেমে না যাওয়া অবধি দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত নগর কর্তৃপক্ষ ৫৭০ কিলোমিটার ড্রেণ নির্মাণ করেছে। অপরিকল্পিতভাবে এসব ড্রেন নির্মানের কারণে অনেক এলাকায় ড্রেন দিয়ে পানি গড়ায় না। কোথাও রাস্তা থেকে উচু, আবার কোথাও ড্রেনের পানি প্রবাহের ঢাল একমুখী না হওয়ায় বা তলদেশ উচু নীচু হওয়ায় এসব ড্রেন দিয়ে পানি নামে না। ফলে অনেক এলাকায় ড্রেনের পানি রাস্তায় নেমে আসার কারণে বর্ষা মৌসুমে শুরুতে একদিনের বৃষ্টিতেই মহানগরীর ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তা, সড়ক মহাসড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।। কোথাও ড্রেনের পানি নেমে যাবার ব্যবস্থা না থাকায় ময়লা আবর্জনার পচা দুর্ঘন্ধযুক্ত বর্জ্য পানি রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। মহানগরীতে ড্রেন নির্মানের প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়নে দীর্ঘসুত্রিতার কারণে এর সুফল পেতে আশাবাদী হতে পারছেন না নগরবাসী।
মরার উপর খাড়ার ঘা হিসাবে এই বর্ষার শুরুতে নগরবাসী ও মহাসড়কের যাত্রীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাড়িয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চলমান বিআরটি প্রকল্প। মহা উন্নয়ন কাজের কারণে মহাসড়কে, ফুটপাথে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত, খানা-খন্দক। মহাসড়কের এলিভ্যাটেডে একপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার নির্মাণের পাশাপাশি এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মহাসড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণ কাজ। মহাসড়কের দুই পাশে যে ড্রেণ নির্মাণ করা হয়েছে তা অনেক সরু। অনেক এলাকায় ড্রেন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে, কোথাও চলমান রয়েছে। অনেক এলাকায় ড্রেনের ওপরে স্লাব/ঢাকনা নেই। ফলে পানি জমে এসব ম্যানহোল পথচারীদের জন্য বিপদজনক হয়ে পড়েছে। আবার বিআরটি ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাথে এ কাজের কোন সমন্বয় নেই। ফলে মহাসড়কে জমে থাকা পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টঙ্গী থেকে ভোগড়া বাইপাসসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়কের ওপর প্রায় হাঁটু পানি জমে গেছে। একারণে মহাসড়কে দিনভর যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ সীমাহীন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, একদিনে টানা বর্ষনের পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার মিনি স্টেডিয়ামের সামনে, টঙ্গী কলেজ গেইট হতে ওয়ান ব্যাংকের শাখা পর্যন্ত, বনমালা রোড এলাকা. টঙ্গী হাসপাতালের সামনে, ভোগড়া বাইপাস এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচল বিগ্নিত হয়েছে। একারণে মহাসড়কে ছুটির দিনেও যানবাহনের গতি ছিল ধীর। মহাসড়কের পানি দ্রুত নেমে গেলে জন দুর্ভোগ কম হবে।
এবিষয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম শফিউল আজম জানান, ধারণ ক্ষমতার বেশী মাত্রায় বৃষ্টিপাতের কারণে সিটি কর্পোরেশনের যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির খবর আমরা পাচ্ছি সেসব এলাকায় জরুরীভাবে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমরা কাজ করছি, দ্রুতই পানি নেমে যাবে। তাছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জমে থাকা পানি নিস্কাশনের দায়িত্ব বিআরটি প্রকল্পের। উন্নয়ন কাজের জন্য অনেক স্থানে খোড়াখুড়ি করতে হয়েছে। মহাসড়কের কাজের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।