গণবাণী ডট কম:
কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ না করতে পারলে কৃষির উন্নয়ন সম্ভব হবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, আমরা যে সকল কৃষি যন্ত্রে ৩০-৭০% পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছি তার অধিকাংশই আমদানী নির্ভর। এই আমদানী নির্ভর কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করে টেকসই কৃষি উন্নয়ন সম্ভব নয়। কৃষি খাতে সরকার বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার আমরা করতে পারছি না। এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম।
তিনি শনিবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর “অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালা-২০২২” এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ ফসলের জাত উদ্ভাবন ও আগামীর কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনে বারির বিজ্ঞানীদের আহবান জানান। তিনি বলেন, শুধু ফসল উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, নিরাপদ ও রপ্তানী উপযোগী ফসল উৎপাদন করতে হবে। আর এটা করতে পারলে আমাদের রপ্তানী আয় অনেক বেড়ে যাবে।
বারি’র কাজী বদরুদ্দোজা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বারি’র মহা পরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার।
কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম, বারি’র পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. মো. কামরুল হাসান, বারি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. তারিকুল ইসলাম এবং পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) ড. ফেরদৌসী ইসলাম।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নার্সভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিএডিসি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বারি’র বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞানী/কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বারি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “কৃষি যন্ত্রপাতি ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাকে লাভজনক করা (এফএমডিপি)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কৃষি যন্ত্রপাতি ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ‘প্রতিভা অন্বেষণ’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ‘কৃষি যন্ত্রপাতি প্রতিভা অন্বেষণ ও বিকাশ পুরস্কার ২০২২’ প্রদান করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় ৩টি ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জনকে তাদের উদ্ভাবনের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। উদ্ভাবনের প্রকৃতি অনুযায়ী পরবর্তীতে তাঁদের সময়াবদ্ধ কারিগরী ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে এবং এসব উদ্ভাবনী থেকে কোন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হলে তা বারি ও উদ্ভাবকের যৌথ নামে প্যাটেন্ট করা হবে বলেও জানানো হয়।
আয়োজকরা জানান, গত ২০২১-২০২২ সনে যে সকল গবেষণা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল সেগুলোর মূল্যায়ন এবং এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী ২০২২-২০২৩ সনে গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালায় জানানো হয়, বারি’র বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ৬২২টি উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিডসহ), রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে চাষোপযোগী জাত এবং ৬০২টি অন্যান্য উৎপাদন প্রযুক্তিসহ এযাবৎ মোট ১,২২৪টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশে তেলবীজ, ডালশস্য, আলু, সবজি, মসলা এবং ফলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই বাছাই ও দেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কর্মসূচি গ্রহণ করাই এ কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য। কর্মশালার কারিগরি অধিবেশনসমূহ আগামী ১৮ জুলাই ২০২২ হতে শুরু হয়ে ১৪ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।