গণবাণী ডট কম:
হিমুর স্রষ্টার মৃত্যু বার্ষিকীতে বরাবরের মতোই নুহাশ পল্লীতে নন্দিত এই লেখককে এবারও স্মরণ করা হলো শ্রদ্ধা-ভালোবাসায়। এ উপলক্ষে লেখকের কবর জিয়ারত, সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা,দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নিয়েছেন তাঁর স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্য, শত শত ভক্ত, হিমু, নুহাপল্লীর স্টাফ ও ভক্ত পাঠকরা। এসব আয়োজনে প্রাণ ফিরে পায় নুহাশপল্লী। তারপরেও এক সীমাহীন শুন্যতা, শুধু নেই সকলের প্রিয় স্যার, পাঠক নন্দিত সেই হুমায়ূন আহমেদ।
নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীতে মঙ্গলবার গাজীপুর সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে পিরুজালী এলাকায় অবস্থিত নুহাশপল্লীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবারের মতো গতকালও নন্দিত লেখকের প্রিয় চরিত্র হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু এবং নীল শাড়িতে রূপা সেজে ভক্ত ও পাঠকেরা ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে এসেছিলেন।এসেছিলেন সাংবাদিক,কবি,সাহিত্যিক,লেখক আর নাট্যজনেরসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। তারা প্রিয় লেখকের স্মৃতি বিজরিত নুহাশ পল্লী ঘুরে দেখেন। এসময় তারা লেখকের প্রতি অতল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা জানান।
সকালে লেখকের লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই পুত্র নিনিত ও নিষাদ হুমায়ূনের উপস্থিতিতে কবর জিয়ারত করা হয়। এসময় হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশক, শুভানুধ্যায়ী, নুহাশ পল্লীর স্টাফ, পাঠক ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। পরে লেখকের আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাত করা হয়। কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে নুহাশ পল্লীতে প্রতি বছরের ন্যায় কোরআনখানী, মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও এতিম শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণের আয়োজন করা হয় ।
হিমু পরিবহনের কয়েকজন সদস্য বলেন, আমরা হুমায়ুনের স্বপ্নের আন্তর্জাতিক ক্যা ন্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বাস্তব রূপ দেখতে চান। তিনি বীবিত থাকাকালে বলেছিলেন, তিনি সুস্থ্য হয়ে ফিরতে পারলে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেননি। এখন আমরা তার স্মৃতি ধরে রাখতে তার বই পড়া, বৃক্ষ রোপনসহ নানা কাজ করে যাচ্ছি।
তার ভক্ত ও অনুসারী চিত্র শিল্পী আসাদ জানিয়েছেন, জনপ্রিয় এই কথা সাহিত্যিক পৃথিবীর মায়া ত্যারগ করে চলে গেলেও তাঁর লেখনির মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। তবে নুহাশ পল্লী কে প্রকৃত দিয়ে সাজানোই ইচ্ছা ছিল হুমায়ুন আহমেদের।
হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানের ক্যা ন্সার হাসপাতাল একার পক্ষে করা সম্ভব না হলেও খুব শীঘ্রই নুহাশ পল্লীতেই হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে।
শাওন বলেন, হুমায়ূন আহমেদের হাতে আঁকা ছবিগুলো অনেকদিন আটকে ছিলো নিউইয়র্কের একজন ব্যক্তির কাছে। আমরা সবগুলো ছবি হাতে পেয়েছি। এছাড়াও হুসমায়ূন আহমেদের সন্তানদের কাছে, আমার কাছে কিছু ছবি আছে। এগুলো সহ হু্মায়ূন আহমেদের হাতে লেখা স্ক্রিপ্টগুলো তার স্মৃতি জাদুঘরে রাখা হবে।
হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্ন ক্যান্সার হাসপাতাল বিষয়ে শাওন বলেন, আমি খুব ক্লান্ত হয়ে যাই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে। আমার একার পক্ষে এটা করা সম্ভব না। তার স্বপ্ন অনুযায়ী ক্যান্সার হাসপাতাল করার শক্তি অর্জন করতে পারিনি। সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে হুয়মায়ূন আহমেদের সম্পদ দিতে তার পরিবার পিছপা হবে না। তবে সুসংবাদ হচ্ছে হু মায়ূন আহমেদের আরেকটি স্বপ্ন ছিলো তার গ্রামের স্কুল নিয়ে। সেটি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছিলো। এমাসেই সেটা এমপিওভুক্ত হয়েছে।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জম্ম গ্রহণ করেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তার বাবা ফয়েজুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। ২০১২ সালে ১৯ জুলাই মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যু র পর নুহাশপল্লীর লিচু তলায় সমাহিত করা হয়।
মন্তব্য