গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বিদ্যালয় ভবনের দেয়ালে ‘দাগ’ দেওয়ার অভিযোগে একটি শ্রেণীর প্রায় ৮০জন শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে পিটিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। রোববার দুপুরে কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পিটানোর ঘটনা ঘটে। তবে, প্রধান শিক্ষক বলেছেন, বিদ্যালয়ের দেয়ালে খারাপ কথা লেখা এবং যে লিখেছে তার নাম গোপন করার অপরাধে তাদের ‘শাসন’ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার ২টা ৪০ মিনিটে ছিল তাদের ইসলাম শিক্ষা ক্লাস। ক,খ ও গ বালক বিভাগের সব শিক্ষার্থীরা এক সঙ্গে এ ক্লাস করে থাকে। প্রতিদিনের মতো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সব শিক্ষার্থীরা একই ক্লাসে উপস্থিত হয়। তখন সেই ক্লাসে হঠাৎ উপস্থিত হন প্রধান শিক্ষক ফাইজ উদ্দিন ফকির। নতুন ভবনের দেয়ালে কে দাগ দিয়েছে বা লিখেছে তা জানতে চেয়ে হাত তুলতে বলেন। কিন্তু জবাবে শিক্ষার্থীদের কেউ দেয়ালে দাগ দেয়নি বা জানেনা বলে জানান। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন প্রধান শিক্ষক। এক পর্যায়ে সবাইকে লাইনে দাঁড় করান তিনি। এরপর নিজেই হাতে বেত নিয়ে এক এক করে সবাইকে পেটাতে থাকেন।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া পাইলট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাইজুদ্দিন ফকির মুঠোফোনে বলেন, আমি প্রধান শিক্ষক, আমার চাকরি আছে ছয় মাস। তাহলে আমি ছাত্রদেরকে কি মারতে পারি? এটি কো এডুকেশন স্কুল। যদি খারাপ ভাষা কেউ দেওয়ালে লেখে-মেয়েরা বিচার দেওয়ার পর আমি একটুও ‘শাসন’ করতে পারবো না বলেন? তাহলে তাদের জানমাল নিরাপত্তা কি আছে বলেন দেখি? আমি তো তাদেরকে এ রকম মারি নাই যে, অঙ্গ হানি বা শরীরের স্পট পরার মত। তাহলে দেশটা কি হয়েছে, এই দেশ জাতি কিভাবে টিকে থাকবে বলেন? আমরাও তো পড়াশোনা করছি। আমাদেরকে যে মাইর মারছে। যদি আমরা এই মাইরে স্কুল ছেড়ে দিতাম, তাহলে আজকে আল্লাহ আমাদের এ পর্যায়ে আনতো বলেন?
শ্রেণী কক্ষের সমস্ত ছেলেদের কেন পেটালেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শোনেন এখন যে ছেলেটা অন্যায় করল, আমি ক্লাসে গিয়ে বললাম, ‘তোমরা বলে দাও কে এই কাজটি করেছে’, ক্লাসের কেউ ওই ছেলেটির নাম বলেনি। নাম না বলাতে হালকা তাদের বিচার করেছি’। তিনি আরো বলেন, ‘সবাইকে মেরেছি, এ কারণে মারছি, যে তোমরা সচেতন হও আর সত্য কথা বলার চেষ্টা করো, তোমরা কেন লুকিয়ে রাখবা? আজকে এটা বোঝার জন্য যে তার অন্যায় লুকিয়ে রাখার কারণে স্যার সবাইকে ‘শাসন’ করেছে’। ‘ছোট ছোট বাচ্চা তাদের কি এমন বিচার করতে পারি? কি মাইর দিছি , তাদের না হয়েছে কোন অঙ্গ হানি না কোন স্পট পড়েছে। এজন্য যদি সাংবাদিকরা ফোনের পরে ফোন করে, তাহলে আমাদের অবস্থানটা কোথায়, আমরা কাদেরকে মানুষ করব বলেন ভাই?
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুস সালাম জানান, তিনি সারাদিন অফিসে ছিলেন না। অফিসের কাজে বাইরে ছিলেন। এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, ঘটনাটি জানার পর সোমবার প্রধান শিক্ষককে আমার অফিসে আসতে বলেছি। তিনি আসলে শুনব, কেন এ কাজ করেছেন, তারপর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।