গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরে আদালত পরিদর্শণে এসে সোমবার সকালে গাজীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে বসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটি পারিবারীক বিরোধ আপোষ-মিমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করেছেন সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফাতেমা নজীব।
আপোস নিস্পত্তির পর উভয় পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর বিচারকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অভিযুক্ত স্বামী।
স্বজনরা জানান,গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পশ্চিম থানার সাতাইশ শরীফ মার্কেট এলাকার জাকির হোসেন শুভর সাথে ২০২০ সালে পারিবরারীকভাবে বিয়ে হয় একই এলাকার আরিফা আক্তার ফারহানার। এ সময়ের মধ্যে তাদের ঘর আলো করে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে। শুভ আগে প্রাইভেটকার চালাত, কিন্তু বর্তমানে তিনি বেকার। নানা বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারীক অশান্তি হতো। একারণে গৃহবধু আরিফা তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক, নারী নির্যাতন ও ভরণ পোষণ না করার অভিযোগে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর গাজীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সোমবার ছিল ঐ অভিযোগের বিষয়ে আপোষ নিস্পত্তির জন্য আলোচনার তারিখ। সকালে তাদের উভয়ের পিতা মাতা, দুইজন প্রতিবেশী গাজীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে উপস্থিত ছিলেন। এসময় সেখানে আকস্মিকভাবে উপস্থিত হন সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফাতেমা নজীব। তিনি বিষয়টি জেনে নিজে বসে উপস্থিত সকলের কাছে বক্তব্য শুনে বিরোধটি আপোস নিস্পত্তি করে দেন।
গাজীপুর লিগ্যাল এইড অফিসার (সহকারি জজ) সুমাইয়া রহমান জানান, গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পশ্চিম থানার সাতাইশ শরীফ মার্কেট এলাকার আরিফা আক্তার ফারহানা তারঁ স্বামীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে যৌতুক, নারী নির্যাতন ও ভরণ পোষণ না করায় চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আমাদের অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ১২ সেপ্টেম্বর বিষয়টির আপোষ মিমাংসার উদ্দেশ্যে অত্র অফিসে মিমাংসা সভার আয়োজন করা হয়। এদিন গাজীপুর কোর্ট পরিদর্শণে আসা বিচারপতি ফাতেমা নজীব ওই সভায় উপস্থিত থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের স্বজনদের বক্তব্য শুনে সকলের সম্মতিতে সাতটি শর্তে ওই বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেন। মিমাংসা সভায় মামলার বাদি ও বিবাদী আপোষ-মিমাংসার শর্ত মেনে স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে নিষ্পত্তি সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, কারো সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না, মিলেমিশে থাকতে হবে, ভরণ পোষণ করতে হবে, নিজেদের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে নিজেরা আলোচনা করে সমাধান করবে, না পারলে অভিভাবকদের জানাবে প্রভৃতি।
এসময় বিচারপতি ফাতেমা নজীব স্বামী ও স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা ঠিক মতো চলবে, ভবিষতে আর যেন এমন ঘটনা না ঘটে সে জন্য উভয়ে সচেতন থাকবে। তিনি আরো বলেন, পারিবারীক বিরোধের ক্ষেত্রে আপোস নিস্পত্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিরোধে মোকদ্দমা দায়ের করার আগে আমাদের আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করা উচিত। পারিবারীক সম্পর্ক গুলো যেন ঠিক থাকে সেজন্য আপোস মিমাংসার চেষ্টা না করেই মোকদ্দমা দায়ের কাম্য নয়। একটি সংসার ভেঙ্গে গেলে সে সংসারের সন্তানদে ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যায়। তারা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠতে পারে না।
এসময় গাজীপুর লিগ্যাল এইড অফিসার (সহকারি জজ) সুমাইয়া রহমান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পিপি মো: শাহজাহান, বাদি-বিবাদীর আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির হোসেন শুভ বলেন, মাননীয় বিচারপতির মাধ্যমে আমাদের পারিবারীক বিরোধ মিমাংসা হয়েছে এতে আমি খুবই খুশী। আমার সংসার ঠিক হয়েছে, আমাদের সন্তানের ভবিষ্যত মঙ্গলের জন্য আমি সকল শর্ত মেনে চলব। তিনি বিচারপতিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।