গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উড়ানোর জন্য আনা গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে দগ্ধ কলকাতার কমেডি শো মিরাক্কেল এর কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
আবু হেনা রনি একাধারে স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান, অভিনেতা, উপস্থাপক ও মডেল। তিনি ২০১১ সালে ভারতীয় টিভি চ্যানেল জি বাংলার ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার্স ৬-এ বিজয়ী হন।
ডা. এস এম আইউব হোসেন বলেন, আবু হেনা রনি শঙ্কামুক্ত নন, এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। তার শ্বাসনালী ও এক কান পুড়ে গেছে। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জানান, আবু হেনা রনি শঙ্কামুক্ত নন। তার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।
তিনি আরো জানান, আবু হেনা রনির সঙ্গে দগ্ধ জিল্লুর রহমান (৩২) নামে আরেকজন যুবককেও আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার শরীরের ১৯ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে, তারও শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।
গত শুক্রবার গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উড়ানোর জন্য আনা গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে কলকাতার কমেডি শো মিরাক্কেল এর অভিনেতা আবু হেনা রনি ও পুলিশের সদস্যসহ ৫ জন দগ্ধ হয়। তাদের মধ্যে রনিসহ তিন জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়। রনি ও জিল্লুর ছাড়া চিকিৎসাধীন অপরজনের নাম মোশাররফ হোসেন।
পুলিশ জানায়, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার গাজীপুর পুলিশ লাইনস মাঠে নাগরিক সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলের পাশেই মঞ্চে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন। গাজীপুর পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ আখতার হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আইজিপি ড.বেনজির আহমেদ। এছাড়াও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানসহ বিপুল সংখ্যক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আয়োজিত অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চের বাইরে উদ্বোধন মঞ্চ স্থাপন করা হয়। শুক্রবার বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য অতিথিদের সাথে নিয়ে উদ্বোধন মঞ্চ ওঠে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় মূল্য মঞ্চের পশ্চিমপাশে অনেকগুলো আতশ বাঝি ফোটানো হয়। আতশবাঝি ফোটানোর সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথিগণ পায়ড়া উড়িয়ে দেন। তারপরে জিএমপি চার বছর পূর্তি লেখা একটি প্ল্যাকার্ডসহ অনেকগুলো গ্যাস বেলুন একসাথে ওড়ানোর চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু বেলুনগুলো আকাশে ওড়েনি। পরে অতিথিগণ বেলুন না উড়িয়েই সেখান থেকে মূল মঞ্চের সামনে নির্ধারিত আসন গ্রহণ করেন।
তারা আরো জানান, পরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য বেলুন বিক্রেতাকে ডেকে বেলুন না ওড়াতে ধমক দেন। তখন বেলুন বিক্রেতা নিজেই বেলুনগুলো ওড়ানোর চেষ্টা করেন। এসময় তিনিসহ অন্যরা বেলুনগুলো বাধন খুলে আলাদা করতে চান। তখন কেউ একজন আগুন দিয়ে বেলুনের সুতা পোড়ানোর জন্য গ্যাস ম্যাচ দিয়ে আগুন জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। কিন্তু আতশবাঝির শব্দের কারণে অনেকই বেলুন বিস্ফোরণের ঘটনাটি বুঝতে পারেননি। বেুলনের বিস্ফোরণের সময় পাশে থাকা কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনিসহ পাঁচজন দগ্ধ হন। তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ সদস্যরা তাঁদের গায়ে পানি ঢেলে আগুন নিভিয়ে দ্রুত তাঁদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় জিএমপির ৪র্থ বর্ষপূর্তীর অনুষ্ঠানে উড়ানোর জন্য কিছু গ্যাস বেলুন নেয়া হয়। প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও সেগুলো উড়েনি। পরে পায়রা উড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য অতিথিরা অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চের দিকে চলে যান। সেখানে গিয়ে কেক কাটেন এবং বক্তব্যে অংশ নেন। এপর বেলুনগুলো নিয়ে যাওয়া হয় উদ্বোধন মঞ্চের পেছনে। কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। উদ্বোধন মঞ্চের পেছনে সবগুলো বেলুনই বিস্ফোরিত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আহতরা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সহকর্মীরা দ্রুত আহতদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
জিএমপির সহকারী কমিশনার (ডিবি ও মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন জানান, বেলুন বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ও আহত ৫ জনের মধ্যে রনি ছাড়া অন্যরা পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল)।
তিনি আরো জানান, বেলুন বিস্ফোরণে আহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে শুক্রবার রাতেই জিএমপির ডিসি (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুর রহমানকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, জিএমপির এডিসি (উত্তর) রেজনোয়ান আহমেদ, এসি (প্রসিকিউশন ফাহিম আশজাদ ও মেট্রো সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
তিনি আরো জানান, এ কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য