গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগর পুলিশের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বেলুন বিস্ফোরণে কলকাতার কমেডি শো মিরাক্কেলের কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনিসহ পাঁচজন দগ্ধ ও আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৯টায় গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর থানায় মামলাটি রুজু করা হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম জানান, থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মোসাব্বির হোসেন বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ কয়েকটি ধারায় রুজু করা হয়েছে। মামলায় পরস্পর যোগসাজশে উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে ক্ষতিকারক দাহ্য পদার্থ/গ্যাস সাপ্লাই করে জননিরাপত্তা বিপন্ন ও সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের গুরুতর আহত করার অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন বাবুল, মানিক ও কিবরিয়া। তারা সকলেই ঐ অনুষ্ঠানে বেলুন সরবরাহ করেছিল।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গাজীপুর মহানগর পুলিশের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুর জেলা পুলিশ লাইন্স আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাদীর ডিউটি ছিল। ঘটনার দিন বিকাল ৫:৪০ মিনিটের সময় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আগত সম্মানিত অতিথিবৃন্দ উদ্বোধনী মঞ্চে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ঘোষণার পর মূল মঞ্চে চলে যায়। পরে বেলা অনুমান ৫:৪৫ মিনিটের সময় বেলুনগুলো আকাশের দিকে না ওড়ে পুলিশ লাইন্সের ভিতর অবস্থিত ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সংলগ্ন পাকা রাস্তার উপরে পড়ে। এ সময় আবু হেনা রনিসহ সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ কনস্টেবল জিল্লুর রহমান, মোশাররফ হোসেন, রুবেল মিয়া আহত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য পুলিশের সহায়তায় এম্বুলেন্সযোগে চিকিৎসার জন্য তাদের গাজীপুর তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য আবু হেনা রনি ও কনস্টেবল জিল্লুর রহমানকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করেন। তারা বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন। অপর কনস্টেবল মোশাররফ হোসেন এবং রুবেল মিয়া প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে যায়।
এজাহারে আরো বলা হয়, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি তদন্ত করিয়া জানা যায়, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বেলুন সাপ্লাইয়ের দায়িত্বে ছিল আসামি বাবুল, মানিক ও কিবরিয়া। তাদের সকলের ঠিকানা অজ্ঞাত। বর্ণিত আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জন নিরাপত্তা বিপন্ন হয় এরকম হীন উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত স্থানে বেলুনের মধ্যে কৌশলে ক্ষতিকারক দাহ্য পদার্থ/ গ্যাস ব্যবহার করে সাপ্লাই দেওয়ার কারণে সেই বেলুনগুলো বিস্ফোরিত হয়। যার প্রেক্ষিতে আবু হেনা রনিসহ দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী (পুলিশ কনস্টেবল) গুরুতর আহত হয়।
মামলা দায়েরের পর মামলাটি গাজীপুর মেট্রো সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মহিউদ্দিন আহমেদকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এদিকে, সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আবু হেনা রনি ও কনস্টেবল জিল্লুরকে দেখতে গিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
এসময় বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। আবু হেনা রনি বলেছে, আগের চেয়ে ভালো বোধ করছে সে। তাদের দুজনের মানসিক শক্তির প্রশংসা করতে হয়। আশা করছি, তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। তাদের সব ধরনের সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।’
আইজিপি আরও বলেন, দুর্ঘটনা কখনো ঘোষণা দিয়ে আসে না। রনির বলেছে, বেলুন উড়ে গিয়ে তার সামনে পড়েছে। দুর্ঘটনার পাঁচ মিনিট আগে বেলুনগুলো আমাদের সামনে ছিল। সেখানেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে অবশ্যই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গাজীপুর মহানগর পুলিশকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
এর আগে শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম দগ্ধদের দেখতে ও চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে আবু হেনা রনিসহ দগ্ধদের সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে শনিবার জিএমপির উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মোহাম্মদ সামছুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, অতিরিক্ত উপকমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রেদওয়ান আহমেদ, সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) ফাহিম আশজাদ, মেট্রোপলিটন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ছিল গাজীপুর মহানগর পুলিশের ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে গাজীপুর পুলিশ লাইন্সে নাগরিক সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি চিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। জিএমপি কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ আখতার হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আইজিপি ড.বেনজির আহমেদ।