গণবাণী ডট কম:
উত্তরাঞ্চলীয় জেলা পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ট্রলার ডুবে নিহত নারী ও শিশুসহ এ পর্যন্ত অন্তত ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে দমকল বাহিনী। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর মাড়েয়া ঘাট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৮ শিশু, ৪ পুরুষ ও ১২ নারী রয়েছেন। এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
করতোয়া নদীতে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে আনুমানিক ১০০ জনের বেশি যাত্রী নিয়ে ওই ট্রলারটি ডুবে যায়।
দমকল বাহিনীর উদ্ধারকর্মী এবং ডুবুরিরা নদীতে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
আউলিয়া ঘাটের অপর পাশেই রয়েছে বদেশ্বরী মন্দির। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব মহালয়া পালিত হচ্ছে আজ। প্রাচীন ওই বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে প্রতিবছরই অনেক বড় অনুষ্ঠান হয় এবং আশপাশের জেলাগুলো থেকে সনাতন ধর্মের বহু মানুষ এতে যোগ দেন।
বোদা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজয় কুমার রায় বলেছেন, নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শরীফুল ইসলাম বলেছেন, ট্রলারের যাত্রীদের বড় অংশটি যাচ্ছিলেন ওই মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
তিনি আরো বলেছেন, বোদা উপজেলার মাড়েয়া, চন্দনবাড়ি, সাকোয়া এবং ব্যাঙহারি এলাকার মানুষ বেশি ছিলেন ট্রলারটিতে, এবং এখন পর্যন্ত উদ্ধার লাশের মধ্যেও এসব এলাকার লোকের সংখ্যা বেশি।
স্থানীয়রা জানান, করতোয়া নদীতে সারা বছরই পানি থাকে এবং এই নদীর ওপর কোন সেতু নেই। ফলে নদী পারাপারের জন্য নৌকা এবং ট্রলারই ভরসা। ফলে প্রতিদিনই নৌকা এবং ট্রলার চেপে প্রতিদিন শত শত মানুষ পার হয়ে পড়াশুনা ও কর্মস্থলে যান।
এদিকে, বোদা উপজেলার দমকল বাহিনীর কর্মীরা এখন উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
দমকল বাহিনীর কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেছেন, নৌকায় যাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। আবার গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে নদীতে স্রোতও অনেক বেশি ছিল।
তিনি বলেন, “করতোয়া নদীতে তিন ফুটের বেশি পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল কয়েকদিনে, ফলে নদী ‘ফুলে’ উঠছিল। যে কারণে মাঝ নদীতে পৌঁছার পর যাত্রীর চাপে নৌকাটি উল্টে যায়।”
নৌকা ডুবে যাওয়ার পর কিছু মানুষ সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও, অনেকেই এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের উদ্ধারে তারা অভিযান চালিয়ে যাবেন।
পুলিশ বলছে, ট্রলারের যাত্রীদের অনেকে নিখোঁজ থাকায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা রয়েছে।
উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা যাত্রীদের কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, উদ্ধার করা মরদেহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরিবারের কাছে পুলিশ স্বজনদের মরদেহ বুঝিয়ে দেবে বলে জানানো হয়েছে।
দমকল বাহিনীর মি. আলী বলেছেন, পঞ্চগড়ের বাইরে অন্যান্য জেলা থেকে আরো ডুবুরি নিয়ে আসা হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার জন্য। “সারারাত উদ্ধারকাজ চলবে, এবং প্রয়োজনে আগামীকালও উদ্ধার অভিযান চলবে,” তিনি জানান।