গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কালীগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদ ময়েজউদ্দিনের ৩৮তম শাহাদাৎবার্ষিকী নানা আয়োজন ও বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় রাজধানীর বনানীতে শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদের কবরে শ্রদ্বাঞ্জলী অর্পণ ও শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. আজমত উল্লাহ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খানসহ জেলা, মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন।
পরে ১১টায় কালীগঞ্জ উপজেলা শহীদ ময়েজ উদ্দিন আহমেদের স্মৃতিস্তম্বে শ্রদ্বাঞ্জলী অর্পণ শেষে ১২টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে উপজেলা কার্যালয়, ২টায় কালীগঞ্জ পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে ঘোড়াশাল ফেরীঘাট ও উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভা ও মিলাদ মাহফিলে মেহের আফরোজ চুমকি, এমপি, অংশগ্রহণ করেন। এ সময় গরীব দুঃখী মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
শহীদ ময়েজউদ্দিন ১৯৩০ সালে ১৭ মার্চ বর্তমান গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছুরত আলী ও মা’র নাম শহরবানু। তিনি ঐতিসাহিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা করার জন্য গঠিত ‘মুজিব তহবিলের’ আহবায়ক ছিলেন। একজন বিচক্ষণ আইনজীবী ও রাজনীতিক হিসেবে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তিনি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন।
ময়েজউদ্দিন উল্লেখযোগ্য সময় ধরে বৃহত্তর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর-কালীগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে যথাক্রমে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।
১৯৭৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ রেডক্রস (বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট) সোসাইটির নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একাধারে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি)’র মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ ময়েজউদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গৌরবময় ভূমিকা পালন করায় বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সব্বোর্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক-এ ভূষিত করেন।
তিনি ১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সারাদেশে ২২ দল হরতালের আহ্বান করে। ওইদিন কালীগঞ্জে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মিছিলে শহীদ ময়েজউদ্দিন নেতৃত্ব দেন। মিছিলটি কালীগঞ্জ বাজার এলাকায় গেলে কতিপয় সন্ত্রাসীদের হামলায় ঘটনাস্থলেই শাহাদাৎ বরণ করেন তিনি।
এছাড়াও শহীদ ময়েজউদ্দিনের ৩৮তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দেওপাড়ায় শহীদ ময়েজউদ্দিন ফেরীঘাট ঈদগাঁ মাঠে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।