গণবাণী ডট কম:
কৃষি পণ্যের গ্লোবাল মার্কেটে প্রবেশ করতে হলে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন চান কৃষি বিজ্ঞানী, গবেষক এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। এজন্য সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত কার্যক্রম জরুরী বলে মনে করছেন তাঁরা। বুধবার গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘কৃষি ক্ষেত্রে গবেষণা এবং মাঠ পর্যায়ে জাত ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণ সম্পর্কিত মতবিনিময়‘ সভায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন তাঁরা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে কৃষি ক্ষেত্রে গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ে উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, সংরক্ষণের অভাবে ফলনোত্তর সময় প্রতি বছর বিভিন্ন কৃষিপণ্য এমনকি মাছ মাংস গড়ে ২০-৩০ শতাংশ নষ্ট/পচে গিয়ে অপচয় হয়ে থাকে। আর্থিক মূল্য প্রতি বছর ২০ হাজার কোটি টাকার কৃষি পণ্য ক্ষতি হচ্ছে। এসব পণ্য সংরক্ষণের জন্য গামা রেডিয়েশন ব্যবহার করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে বিনা। বিভিন্ন উন্নত দেশে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা কৃষি পণ্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করেন এবং বিদেশে রপ্তানি করেন। আমাদের দেশে যদি এ প্রযুক্তির ব্যবহার করা যায় তাহলে বিশ্ববাজারে কৃষি পণ্য রপ্তানি করা সহজ হবে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানান, রেডিয়েশনের এই প্রযুক্তি ফল বা সবজিতে ব্যবহার করলে পঁচবে না, ফ্রেশ থাকবে। ফলে রং, স্বাদ কোন কিছুতে পরিবর্তন আসবে না। এ পদ্ধতি মাছ ও মাংসেও ব্যবহার করা যাবে। এটি মানব দেহের জন্যও ক্ষতিকর নয়। বিনা এ প্রযুক্ত উদভাবন করলেও এটি দেশে ব্যবহার হচ্ছে না। এতদিন কেন এ প্রযুক্তি ব্যবহার হলো না তা নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি দ্রুত এ প্রযুক্তি সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেন এবং সরকারের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মোঃ মকবুল হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ডঃ নাহিদ রশিদ, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব (অব:) কামরুন নাহার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ডঃ শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ডঃ মোঃ শাহজাহান কবির।
মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও অন্যান্য বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার মহাপরিচালক ও পরিচালকবৃন্দ, এটুআই প্রকল্প পরিচালক,কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সকল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকগণ,জিএমপি কমিশনার, গাজীপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্রি বিভাগীয় প্রধানগণ, বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মন্ত্রী পরিষদ সচিব অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে ব্রি রাইস মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন ।পরে উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ, হাইব্রিড রাইস বিভাগ ,কৌলি সম্পদ ও বীজ বিভাগ, জীব প্রযুক্তি বিভাগ, শস্যমান ও পুষ্টি বিভাগ, কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগ, রাইস ফার্মিং সিস্টেম বিভাগ, খামার যন্ত্রপাতি ও ফলনোত্তর প্রযুক্তি বিভাগ, কৃষি অর্থনীতি বিভাগ , খামার ব্যবস্থাপনা বিভাগ সহ অন্যান্য বিভাগের স্টল পরিদর্শন করেন এবং এসব বিভাগের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান।
রাইস মিউজিয়াম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মিনিকেট নামে কোন চাল বিক্রি করা যাবেনা। মিলে চাল বাজারজাত করার সময় তাতে জাতের নাম লিখে দিতে হবে, তা না করলে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তিনি বলেন, সম্প্রসারণ বিভাগ কিছুদিন আগে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গবেষকদের উদ্ভাবিত জাতগুলো যদি বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে আরও সুন্দরভাবে কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে দ্রুত কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি, তবে আমাদের ফলন আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে ডাবলের কাছাকাছি চলে যাবে।