গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরে স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করাকালীন বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় এক নারী পোশাক কর্মীকে স্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে লাশ ওয়্যারড্রবে ভরে সড়কের পাশে ফেলে দেয়া হয়। পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় হিসাবে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনার ৪ দিনের মাথায় উক্ত হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত প্রেমিকসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মঙ্গলবার গ্রেফতার প্রেমিকসহ হত্যাকান্ডে জড়িত ৩ জনকে আদালতে সোপর্দ করলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
নিহত পোশাক কর্মীর নাম ছামিনা খাতুন ওরফে সাবিনা (৩২)। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার দাড়ারপাড়ার আয়নাল হকের মেয়ে।
গ্রেফতার আসামী হলো,শেরপুর জেলার নকলা থানার মাওড়া এলাকার মর্তুজ আলীর ছেলে হলো,মো: রাকিবুল হাসান সুমন (২৪), সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ থানার চৌবাড়ী এলাকার মো: শাহ আলম আকন্দের ছেলে শাহরিয়ার আকন্দ (১৯) ও টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার নব্বগ্রামের মো: দুলাল মিয়ার ছেলে মোঃ ফারুক হোসেন (২৪)। তাদের গত ১৭ অক্টোবর রাতে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া বুধবার ভোরে অপর আসামী নাইম (২৭) কে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানার ধনকুরা এলাকার মো: সুনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার বিকালে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ সব তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, প্রায় এক যুগ আগে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার দেউপুর এলাকার মোজাম্মেল হকের সাথে নিহত সাবিনা বিয়ে হয়। তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। ১০ বছর সংসার করার পর প্রায় ২ বছর আগে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। তারপর থেকে সাবিনা গাজীপুরে এসে একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেয়। এখানে সাবিনার সাথে সুমনের প্রেমের স্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা গাজীপুর মহানগরীর সাইনবোর্ড এলকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করতো। প্রায় দুই বছর এভাবে চলছিল। সাবিনা বিয়ে করার জন্য সুমনকে চাপ দিত। কিন্তু সুমন বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় কিছুদিন পূর্বে স্থানীয় লোকজন দিয়ে সুমনকে মারধর করে। এরপর সুমন সাবিনাকে ছেড়ে তার আগের স্ত্রীর কাছে চলে যায়।
তিনি আরো জানান, সুমন চলে যাবার পর সাবিনা ফোন করে সুমনকে বিরক্ত করতো ও বিয়ের জন্য চাপ দিত। একারণে সুমন তার সহযোগী নাঈমের সাথে পরিকল্পনা করে গত ১৩ অক্টোবর রাতে সাবিনাকে নাঈমের গাজীপুর মহানগরীর বাসন এলাকার ভাড়া বাসায় ডেকে আনে। সুমন সাবিনার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। সাবিনা বিয়ের জন্য সুমনকে চাপ দিলে সুমন ও নাইমের সাথে সাবিনার কথা কাটাকাটি হলে সাবিনা সুমন ও নাঈমকে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এসময় নাঈম সাবিনার হাত চেপে ধরে ও সুমন গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে সাবিনাকে হত্যা করে। পরে তারা বাসার নিকটর্তী একটি ফার্ণিচারের দোকান থেকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে কিস্তিতে একটি ওয়্যারড্রব কিনে এনে তার ভেতরে লাশ রেখে তালাবদ্ধ করে রাখে।
তিনি জানান, পরদিন ১৪ অক্টোবর সকালে লাশ সরানোর জন্য নাঈম তার ভায়রা ভাই আসামী ফারুক হোসেনকে পিকআপসহ আসতে বলে। পরে ওয়্যারড্রব পিকআপে থোনার জন্য সুমন ও নাঈম শাহরিয়ার আকন্দকে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসে। আসামী সুমন, নাঈম, শাহরিয়ার ও ফারুক চারজন মিলে লাশ ভর্তি ওয়ারড্রোব পিকআপে তুলে ১৪ অক্টোবর বিকালে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানাধীন বিকেবাড়ীতে একটি আবাসিক এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মনে করেছিল বাসা বদল করার জন্য হয়ত ওয়্যারড্রব এনে রেখেছে। কিন্তু পরে রাত ১২টার দিকে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ রাত দেড়টার দিকে ওয়্যারড্রবের তালা ভেঙ্গে মরদেহ উদ্ধার করে। পরে পিবিআই পরিচয় শনাক্ত করে। এঘটনায় নিহতের ভাই জসিম উদ্দীন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের নামে মামলা দায়ের করেন।