নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর):
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলাধীন টোক ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে বুধবার সকালে জমি নিয়ে বিরোধের কারণে প্রতিবেশীর মারধরে এক বৃদ্ধ মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো দুজন। পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।
নিহতের নাম মফিজ উদ্দিন (৫৫)।তিনি কাপাসিয়া উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের আনসার আলীর ছেলে। তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। তাঁর প্রথম সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে এবং দ্বিতীয় সংসারে স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে।
অভিযুক্তরা হলো, একই এলাকার নবী হোসেন (৫০), নূর হোসেন (৩২), মকবুল হোসেন (২২) ও মাসুদা খাতুন (২৫), জোহরা খাতুন (৪৮) ও আকাশ (২২)। তারা সবাই মফিজ উদ্দিনের প্রতিবেশী।
পরিবার ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, মফিজ উদ্দিনের সাথে অভিযুক্ত প্রতিবেশীদের প্রায় দুই বছর ধরে জমি জমা নিয়ে বিরোধ চলছিল।এ বিরোধ নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক মামলা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার রাতে মফিজ উদ্দীনের সাথে প্রতিবেশীদের পূর্ব বিরোধের সূত্রে কথা কাটাকাটি হয়। এ কারণে মফিজ উদ্দীন ভয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারের বড় ছেলে মোঃ মাসুদ রানার বাড়িতে গিয়ে রাত্রী যাপন করেন। বুধবার সকালে মফিজ উদ্দীন ছেলে মাসুদ রানাকে নিয়ে কাপাসিয়া থানার আসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। পথে টোক নয়ন বাজারে পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড এলাকার কানাইয়ার মোড়ের একটি হোটেল থেকে নাস্তা করেন। নাস্তা খেয়ে হোটেল থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে অভিযুক্তরা মফিজ উদ্দীনের হামলা করে। এসময় তাদেরকে এলোপাথাড়ি মারপিট করা হয়। আহত অবস্থায় তাদেরকে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎস মফিজ উদ্দীনকে মৃত ঘোষণা করেন।
টোক নয়ন বাজারের কানার মোড় এলাকার বাসিন্দা মির্জা আলী জানান, মানুষের চিৎকার শুনে তিনি বাড়ির বাইরে এসে দেখতে পান মফিজ উদ্দিনকে চারজন মিলে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। নিহতের মেয়ে রবিজা খাতুন বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে তার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে অভিযুক্তরা। তারা দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
মফিজ উদ্দীনের মেয়ে রমিজা বলেন, বুধবার সকাল সাতটার দিকে জমির কাগজ নিয়ে বাবা ও ভাই বাড়ি থেকে বের হয়। টোক বাজারের কাছাকাছি গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন বাবা ও ভাইয়ের উপর হামলা চালায়। আমার বাবার মাথায় ও পেটে আঘাত করলে বাবা মাটিতে পড়ে যায়। তারপর তারা আমার ভাইকে মারতে শুরু করে। হামলার খবর শুনে ঘটনাস্থলে মা গেলে মাকেও তারা মারতে শুরু করে। তাদের হামলায় বাবা মারা গেছে মা এবং ভাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
রমিজা বলেন, বাবা-মা ও ভাইদের উপর হামলা করেছে নূরুসেন, জোহরা খাতুন মাহমুদা খাতুন, মকবুল হোসেন, নবীর হোসেন ও আকাশ।
নিহত মফিজ উদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রীর মোর্শেদা বলেন, আমার স্বামীর দুই সংসার। আমাদের দুই সতীনের মাঝে কোন বিরোধ নেই। আমাদের বিরোধ জমিজমা নিয়ে আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে। তাদের ভয়ে মঙ্গলবার রাতে আমাদের বাড়ি ছেড়ে পাশের টেকে গিয়ে রাতে ঘুমাইতে হয়েছে। বুধবার খুব সকালে আমার স্বামী জমির কাগজপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। সাথে আমার ছেলে ও সতীন যায়। প্রতিবেশীরা এর আগেও দুইবার আমার স্বামী সন্তানদের উপর হামলা চালায়। মঙ্গলবার দিন তারা শাসিয়েছে আমার স্বামীকে মেরে ফেলবে। সেই ভয়ে আমার সতীন ও আমার ছেলে আমার স্বামীর সাথে জমির কাগজপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। আমার ভাসুর তার মেয়ে তার ছেলে ও নাতি ও আরো লোকজন নিয়ে আমার স্বামী ও সন্তানদের উপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমার স্বামী মারা যায়। তিনি আরো বলেন, আমার সতীন ও আমার ছেলে আহত হয়। এখন আমাদের এই দুটি পরিবারের কি হবে কে দেখবে আমাদের এই সংসার।
বুধবার অভিযুক্ত মকবুল ও অন্যান্যদের বাড়িতে গেলে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের বাড়ীর সবগুলো ঘরে তালা দেওয়া। আশপাশের লোকজন জানিয়েছেন ঘটনার পর থেকে তারা বাড়িতে নেই। কোথায় গেছে তারা জানেন না। অভিযুক্তদের একজন মোঃ মকবুলের মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি তার রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম নাসিম বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় কাপাসিয়া থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছেন। তারা হলেন, মাসুদা খাতুন (২৫), তার মা জোহরা খাতুন (৪৮) ও আকাশ (২২)।