গণবাণী ডট কম:
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ হয়েছে সিত্রাং। এটি আরও সামান্য উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এ কারণে কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।
ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিত্রাংয়ের শক্তি ক্রমশ বাড়ছে। এটির কেন্দ্রে শক্তি বাড়তে বাড়তে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির যে গতিপথ, এতে এটি বাঁক খেয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসবে। আগামী মঙ্গলবার বরিশাল অঞ্চলে আঘাত হেনে স্থলভাগে উঠে আসবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ পরিণত হয়ে এটি পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় (অক্ষাংশ: ১৬.৩° উত্তর, দ্রাঘিমাংশ: ৮৮.২° পূর্ব) অবস্থান করছে। এটি সোমবার সন্ধ্যা ০৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৭০ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৭১০ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭০০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০-৫০ কি.মি. বেগে দমকা/ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেইসাথে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞানী অখিল শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, রোববার (২৩ অক্টোবর) রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর সোমবার সকাল নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে সিত্রাং। তখন ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে ঘণ্টায় বাতাসের একটানা গতিবেগ উঠে যাবে ১০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ওই দিন রাতেই এটি আরও শক্তি সঞ্চয় করলে ঘর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ উঠবে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। মঙ্গলবার সকালে সুন্দরবনের তিনকোণা দ্বীপ ও নোয়াখালীর সন্দ্বীপের মাঝ দিয়ে বরিশাল বিভাগের স্থলভাবে উঠে আসবে সিত্রাং।
তিনি আরো বলেন, এরপর শক্তিক্ষয় হয়ে প্রথমে শুধু ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। দিনভর ধীরে ধীরে আরও শক্তি ক্ষয় করে মঙ্গলবার রাতেই এটি নিম্নচাপে পরিণত হবে। এরপর বুধবার শক্তি হারিয়ে পরিণত হবে সুস্পষ্ট স্থল লঘুচাপে।
এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৫-০৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশের দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।
ঢাকায় উত্তর/উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১০-১৫ কি.মি., যা অস্থায়ীভাবে দমকা আকারে ৩০-৪০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আর বর্ধিত পাঁচদিনের প্রথম দিকে আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে।