গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের শ্রীপুর থানা এলাকায় জমিজমা নিয়ে বিরোধে ভাইকে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করার ২৯ বছর পর সোমবার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে দুই সহোদর ভাইয়ের আমৃত্যু কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অপর পাঁচ আসামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া দোষ প্রমাণ না হওয়ায় একজনকে খালাসের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এসময় আদালতের কাঠগড়ায় দন্ডিত ও খালাস পাওয়া আসামীগণ উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক বাহাউদ্দিন কাজী এ রায় ঘোষণা করেন।
নিহতের নাম সুলতান উদ্দিন (৫৫)। তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন বেড়াইদেরচালা এলাকার ধনাই বেপারীর ছেলে।
আলোচিত এ মামলায় বাদী ছিলেন নিহতের ভাই মো. মোতাহার হোসেন। আর বাদি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন নিহতেরই এক ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর। তিনি গাজীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী হিসবে কর্মরত।
মামলার রায়ে দন্ডিতদের মধ্যে নিহতের দুই ভাই মো: মাইন উদ্দিন (৬৫) ও তার ভাই আবুল কাসেম বেপারীকে (৬০) আমৃত্যু কারাদন্ড ও ১০হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলো স্থানীয় আব্দুল কাদিরের ছেলে দুলাল উদ্দিন (৫০), ধনাই বেপারীর ছেলে আ: মান্নান (৫৫), বেলতলী এলাকার সোনা উল্লাহর ছেলে মাইন উদ্দিন (৬০) একই এলাকার শুক্কুর আলীর ছেলে মো. আজিজুল হক (৬০)। বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত হলো স্থানীয় মো. গিয়াস উদ্দিন (৬০)।
বাদি পক্ষের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর জানান, জমি-জমা নিয়ে ভিক্টিম ও আসামিদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছিল। হত্যাকান্ডের ১৫ দিন আগেও আসামীদের কয়েকজন সুলতান উদ্দিনকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। একারণে ১৯৯৩ সালের ৩১ আগস্ট শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়রী (জিডি) করা হয়। জিডি’র ১৫দিন পরই বাবাকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ১৯৯৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে নিহত সুলতান উদ্দিনের বসত ঘরে বসে তার ভাই মোতাহার হোসেন ও প্রতিবেশি মুজিবুর রহমান পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে সুলতান উদ্দিনের সাথে আলোচনা করছিলেন। এসময় আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ দন্ডিতরা আরো কয়েকজনকে নিয়ে ওই ঘরের খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে। এক পর্যায়ে তারা সকলকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সুলতান উদ্দিনকে ধরে বুকে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে। এসময় সুলতান উদ্দিনের ডাকচিৎকার শুনে দুই ছেলে মোবারক হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ পিতাকে রক্ষা করতে গেলে তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে জখম করে। পরে তাদের ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে গেলে দন্ডিতরা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়।
পরে এঘটনায় নিহতের ভাই মো. মোতাহার হোসেন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ তদন্ত শেষে ১৯৯৫ সালে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১৯৯৭ সালে গাজীপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচার কাজ শুরু হয়। দীর্ঘদিন শুনানী ও ১৪জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে সোমবার আসামিদের উপস্থিতিতে এ মামলার রায় দেন আদালত।
তিনি আরো জানান, গত ২৫ বছরে মামলা চলাকালীন অভিযুক্ত ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা হলেন, একই এলাকার ময়েজ উদ্দিন বেপারী, মোমেন, মোস্তফা, আব্দুল ওয়াহাব ও হানিফা।
এ মামলায় বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. সুলতান উদ্দিন এবং আব্দুর রশিদ।
রায়ে ভিক্টিমের দুই ভাইয়ের আমৃত্যু কারা দন্ড ও প্রতেকের ১০হাজার টাকা জরিমানা এবং অপর পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। অপর আসামি গিয়াস উদ্দিনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
নিহতের ছেলে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর আরো জানান, আমার পিতাকে যখন হত্যা করা হয়, তখন আমার বয়স ছিল ৫ বছর। বড় হয়ে পিতা হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের জন্য আমি আইনজীবি হয়েছি। সন্তান হিসাবে আমার পিতা হত্যার বিচার করতে পেরেছি, এ আমার অনেক বড় পাওয়া।