গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে আংশিক কমিটি ঘোষণা পরই সভাস্থলে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মী মন্ত্রী-এমপির সামনে বিক্ষোভ করে এবং শতাধিক চেয়ার ভাংচুর ও ব্যানার তছনছ করেছে। পরে নেতৃবুন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
বুধবার গাজীপুর মহানগরীর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে বাসন থানা আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলনটি উৎসবের আমেজ নিয়ে শুরু হলেও দিন শেষে শেষ হয় ভাংচুরের মধ্যদিয়ে।
এ সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন গাজীপুরের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার ভুইয়া, গাজীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠণিক সম্পাদক মো. মির্জা আজম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আজমত উল্লাহ খান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রমূখ। এতে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সম্মেলনের আহবায়ক আফজাল হোসেন সরকার রিপন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারী জানায়, মহানগরীর বাসন থানা আওয়ামী লীগ সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষে বিকাল ৩টার দিকে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। এসময় উল্লেখিত নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আজমত উল্লাহ খান সম্মেলনে বাসন থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীদের নামের তালিকা ঘোষণা করেন। সম্মেলনে সভাপতি পদে তিন জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ২০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। পরে সভাপতি পদের প্রার্থীরা প্রফেসর আব্দুল বারীকে সমর্থন দিয়ে নিজেরা সরে দাড়ান। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রফেসর আব্দুল বারী বাসন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক পদে ২০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪-৫ তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। অন্যরা প্রত্যাহার করেনি। পরে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আজমত উল্লাহ খান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেমকে সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে সফিকুল ইসলাম সফি, আমির হোসেন ও রকিব সরকারের নাম ঘোষণার পরপরই পদ বঞ্চিতদের সমর্থকেরা সম্মেলন স্থলে হৈচৈ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে সম্মেলন স্থলে ভাঙচুর চালায়। তারা মঞ্চের সামনে কয়েক শত চেয়ার, টেবিল, ফ্যান, পতাকা স্ট্যান্ড, সাউন্ড সিস্টেম ভাঙচুর করে। আশেপাশে থাকা সম্মেলন উপলক্ষে টানানো বিভিন্ন প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন ছিড়ে ফেলে তছনছ করেছে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলে এ তাণ্ডব। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল বলেন, খুবই সুন্দর পরিবেশে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকলের সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কোন কারণ ছাড়াই কিছু অনুপ্রবেশকারী শান্তিপূর্ণ সম্মেলনের বদনাম করার জন্য কিছু চেয়ার ছুড়াছুড়ি করেছে, ব্যানার ফেস্টুন তছনছ করেছে। যা কোনভাবেই কাম্য ছিল না।
জিএমপির বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মালেক খসরু খান জানান, সম্মেলনে উত্তেজিত হয়ে কিছু নেতাকর্মী চেয়ার ছুড়াছুড়ি করেছে। পরে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, বৈধ সরকারের বিরদ্ধে সংবিধানকে লঙ্ঘন করে হুমকি দেয় তাদেরকে ১১ ডিসেম্বর থেকে সুযোগ দেওয়া হবে না। জনগণ যদি রুখে দাঁড়ায়, তার যে পরিণতি হবে সেজন্য আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনার সরকার দায়ী থাকবে না।
মন্ত্রী বলেন, যে বিদেশী প্রভুদের উস্কানিতে আপনারা গাছে চড়েছেন, মই কিন্তু থাকবে না। তাই কথা বার্তা হিসেবে করে বলেন। আমরাও বলে দিতে চাই, যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, বৈধ সরকারের বিরদ্ধে সংবিধানকে লঙ্ঘন করে হুমকি দেয়, ১১ ডিসেম্বর থেকে তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হবে না। জনগণ যদি রুখে দাঁড়ায়, তার যে পরিণতি হবে সে জন্য আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনার সরকার দায়ী থাকবে না। আপনারা সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন আর আমরা আঙ্গুল চুষব এ কথা মনে করে থাকলে আপনারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করেন, আপনাদের কেউ বাঁধা দেবে না। কিন্তু আইন হাতে তুলে নিলে পরিণতি ভাল হবে না।
সম্মেলনকে ঘিরে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা সম্মেলনস্থলে এসে ভিড় জমান। কলেজ মাঠ ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়কে ব্যানার, ফেস্টুন, বিল বোর্ড ও তোরণ দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয়। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে ৩১জন কাউন্সিলর ও ২০০জন করে ডেলিগেইটসহ মোট ১২শ’ ডেলিগেট অংশ গ্রহণ করেন।