গণবাণী ডট কম:
কাজ শুরুর প্রায় এক দশক পর বহু প্রত্যাশিত বাস র্যাপিট ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের একটি ফ্লাইওভারের ঢাকা মুখী দুটি লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে রোববার। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলকারী মানুষের জন্য বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সুখবর জানিয়েছেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় যান চলাচলের জন্য ঢাকা মুখী দুটি লেন উন্মুক্ত করবেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়েছে, বিআরটি প্রকল্পের ৪.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আব্দুল্লাহপুর হাউজ বিল্ডিং থেকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত অংশে ঢাকামুখী দুটি লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, যান চলাচলের জন্য লেন দুটি উন্মুক্ত করার পর গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন প্রান্তে মন্ত্রী সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবেন।
এর আগে তিনি আরো জানিয়েছিলেন, বিআরটি প্রকল্পের গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অংশে নির্মিত ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শেষ করার পর গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এর সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়। ফ্লাইওভারটি কয়েক দফা সরেজমিনে পরিদর্শন করে তারা সড়কের নিরপাত্তা সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে তাদের মহামত ও পরামর্শ প্রদান করেন। আমরা এটির নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে যে সব পরামর্শ প্রদান করেছিলেন সেসব বিষয় বাস্তবায়ন করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব রকম যানবাহনের জন্যই ঐ অংশটুকু খুলে দেয়া হবে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের যানজট দূর করতে ২০১২ সালে হাতে নেওয়া হয় বিআরটি প্রকল্প। কিন্তু, প্রকল্প শুরুর পর চার দফা সময় বাড়িয়েও সর্বশেষ নির্ধারিত সময়েও শেষ হচ্ছে না বাস র্যা পিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের কাজ। সর্বশেষ মেয়াদ বৃদ্ধির পর চলতি বছরের ডিসেম্বরে বহুল আলোচিত বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। ৬ বছরে কাজ শেষ করার থাকলেও নানা অজুহাতে সময় বাড়ানো হয়েছে চারবার। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রকল্প ব্যায়। সময় ফুরিয়ে গেলেও কাজ এখনো ফুরোয়নি। তাই আবারো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট সরেজমিনে পরিদর্শণে এসে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, গড়ে এ প্রকল্পের কাজ ৮০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে আরও মাস তিনেকের মত অর্থাৎ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
জানা যায়, রাজধানী হতে সড়ক পথে গাজীপুরের দুরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। যানজট না থাকলে সড়ক পথে খুব সহজেই গাজীপুরে আসা যায়। দেশের অন্যান্য স্থানের সাথেও সড়ক পথে গাজীপুরের যোগাযোগ ভালো। গাজীপুরকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এপথ দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৭টি জেলা এবং উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষ এপথ ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে গাজীপুরের গুরুত্ব অপরিসীম।
এ গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে হাতে নেয়া বিআরটিএ‘র শুরুতে প্রকল্পের বিবরণীতে বলা হয়েছিল, অপেক্ষাকৃত ঘনবসতিপূর্ণ গাজীপুরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বসবাসযোগ্য হবে গাজীপুর নগরী। সহজ হবে গণমানুষের যাতায়াত। বাড়বে ঢাকার গতি। তখন আরো বলা হয়েছিল, ব্যক্তিগত যানবাহন নয় শুধুমাত্র গণমানুষের পরিবহনের জন্য সড়কের মাঝখানে নির্মিত হবে বাস রিপিট ট্রানজিট কোন সিগনাল চালাই ছাড়াই এসব গণপরিবহন চলবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। স্বপ্ন দেখানো হয়েছে,বিআরটি চালু হওয়ার পর প্রতি ঘন্টায় ২০ হাজার যাত্রী গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে যেতে পারবে। আর গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট। এতে সড়কের দুই পাশের যানজট কমবে। সহজ হবে মানুষের যাতায়াত। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে গাজীপুর সিটির যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে। সিটি করপোরেশনে বসবাসরত জনগণ ও দূর-দূরান্তের যান চলাচলে খুলে যাবে এক নতুন দিগন্ত।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিআরটি প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আবদুল্লাহপুর থেকে টঙ্গীর চেরাগআলী পর্যন্ত ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার উড়াল সড়ক ও ৬টি ফ্লাইওভার নির্মাণ। সড়কের প্রধান করিডোরের সঙ্গে সংযোগের জন্য বিভিন্ন অংশে ১১৩টি সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ২৫টি বিআরটি স্টেশন নির্মাণ, ঢাকা বিমানবন্দর ও গাজীপুরের শিববাড়ী এলাকায় দুটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ। বাস স্টপেজে প্রবেশ ও বের হওয়া এবং পথচারী পারাপারের জন্য ৩০টি আন্ডারপাস নির্মাণ, পুণ:নির্মিত সড়কের দুই পাশে উচ্চ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪১ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ। ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাত নির্মাণ।