গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরকে আবর্জনার শহর বলা হলে একটুও বাড়িয়ে বলা হবে না। মহানগরীর সর্বত্র এখানে সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে নানা রকম আবর্জনা। আর এই আবর্জনার দুর্গন্ধের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে তিতাস গ্যাসের দুর্গন্ধ। মহানগরীসহ জেলার যেসব এলাকায় তিতাস গ্যাসের সরবরাহ লাইন রয়েছে, সমস্ত এলাকা জুড়ে এক ধরনের তীব্র ঝাঁঝালো দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের শ্বাসকষ্ট ও পেটের পিড়াসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সাথে রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্ক।
স্থানীয়রা জানান, মহানগরীর প্রায় সকল আবাসিক এলাকায়, রাস্তার পাশে যে সব এলাকায় তিতাস গ্যাসের সঞ্চালন ও সরবরাহ লাইন, রাইজার রয়েছে, সে সব এলাকায় গত কিছু দিন ধরে গ্যাসের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। গ্যাসের প্রভাবে অনেকের স্বাসকষ্ট, পেট ব্যাথা ও পেটের পিড়া দেখা দিয়েছে। কিন্তু এটি কিসের গ্যাস, এ নিয়ে তাদের কি করা উচিত তারা এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে, সকলের মধ্যে গ্যাস থেকে অগ্নিকান্ড ঘটার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাস গ্যাসের এক কর্মকর্তা জানান, তিতাসের গ্যাস লাইনে মিথেন গ্যাস থাকে। এই গ্যাস গন্ধ এবং বর্ণহীন থাকার কারণে কোথাও গ্যাস লিকেজ হচ্ছে কিনা তা বুঝা যায় না। তিতাসের লাইসে লিকেজ শনাক্ত করার জন্য মিথেন গ্যাসের সাথে অডরেন্ট ইউজ করা হচ্ছে। এটা গাজীপুর এবং ভানুয়া স্টেশন থেকে গ্যাসের সাথে মিশানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন,ইদানিং গ্যাসের প্রেসার কম থাকার কারণেই এই অডরেন্ট ইউজ করা হচ্ছে, কারণ প্রেসার কম থাকলে কোন লিকেজ থাকলে তা ধরা সম্ভব হয় না, অডরেন্ট দিলে লিকেজ সনাক্ত করা সহজ হয়।
কিন্তু তিতাস কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জনসচেতনা সৃষ্টি করার জন্য কোনো পূর্ব ঘোষণা দেয়নি। অথবা স্থানীয় জনসাধারণকে এই সংক্রান্ত কোনো গন্ধ পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষকে জানানো প্রয়োজন এমন কোন নির্দেশনাও প্রদান করেনি। ফলে মানুষ যদি বিষয়টি উপেক্ষা করে এবং সাধারণ কোন গন্ধ মনে করে না জানায়, তাহলে এই গ্যাস মিশ্রিত করে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার বিফলে যাবে। লিকেজ শনাক্ত বা বন্ধ করার উদ্দেশ্য অর্জিত হবে না বলে মনে করছেন অনেকে।
শহরের লক্ষীপুরা এলাকার একটি পাঁচ তলা ভবনের মালিক মোঃ মানিক জানান, আমি হঠাৎ করে বাইরে থেকে বাসায় এসে গ্যাসের তীব্র গন্ধ পাই। আমার স্ত্রী আমাকে গ্যাসের লাইন চেক করার জন্য বললে আমি সাথে সাথে আমার সমস্ত গ্যাসের পাইপ গুলি চেক করি। পাইপের সংযোগস্থল রেঞ্জ দিয়ে টাইট করে দেই। তারপরও গ্যাসের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ দূর হয়নি। পরে আমি আশেপাশে আরো খোঁজ নিয়ে দেখতে জানতে পারি লক্ষ্মীপুরা এলাকার অনেক জায়গা থেকেই এ ধরনের গন্ধ বের হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে একটি আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্যাস লিকেজ হয়ে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ,তারা এ ধরনের আতঙ্কে রয়েছে।
শহরের পশ্চিম জয়দেবপুর এলাকার বাসিন্দা শাহীন জানান, রোববার সকালে আমার বাসার সামনে আমি গ্যাসের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ পাই। কোথাও গ্যাস লাইন লিকেজ হয়েছে এরকম সন্দেহ জাগলে আমি আমার বাসার আশেপাশের গ্যাসের লাইন চেক করে দেখি যে কোথাও গ্যাসের লিকেজ নেই। পরবর্তীতে শহীদ স্মৃতি স্কুলের আশেপাশেও এরকম গ্যাসের তীব্র ঘ্রাণ পাওয়া যায়। এ সময় অনেক লোকদের মধ্যে গ্যাস লিকেজ হয়েছে এরকম একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্যাসের গন্ধে অনেকের স্বাসকষ্ট ও পেট ব্যাথার মত সমস্যা হচ্ছে।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) রিদওয়ানুজ্জামান জানান, গাজীপুর শিল্পনগরী এলাকা হওয়াতে এখানে গ্যাসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে গ্যাসের চাপ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কমে গেছে। অনেক কারণের মধ্যে একটি রয়েছে গ্যাসের লিকেজ থাকা। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের ধারণা লিকেজের কারণেও গ্যাসের চাপ কমে থাকতে পারে। তাছাড়া লিকেজ থেকে অগ্নিকান্ডসহ দুর্ঘটনার ঝুকি রয়েছে। এ কারণে গ্যাস লাইনের কোথায় লিকেজ হয়েছে তা জানার জন্য তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ একটি গ্যাস তিতাসের মিথেন গ্যাসের সাথে মিশ্রিত করে দিয়েছে, যাতে করে এই গ্যাসের গন্ধ মানুষ পায় এবং বিষয়টি তিতাস কর্তৃপক্ষকে জানায়। তিনি বলেন, আমাদেরকে জানালে আমরা সংশ্লিষ্ট স্থানে গিয়ে লিখে অনুসন্ধান করে তা বন্ধ করব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,গাজীপুরে ১০-১২ হাজার কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন ও সরবরাহ লাইন রয়েছে। সমস্ত এলাকা ঘুরে কোথায় কোথায় গন্ধ ছড়াচ্ছে বা লিকেজ রয়েছে, তা জানা তিতাসের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই স্থানীয়দেরকে গ্যাসের গন্ধ পেলে আমাদের জানাতে হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,জনসচেতনা সৃষ্টি করার জন্য তারা কোন উদ্যোগ নেননি। তবে, তিনি স্থানীয় জনসাধারণকে এ ধরনের কোন গন্ধ পাওয়া গেলে তা তিতাস কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাক্তার শাফি মোহাইমেন বলেন, যে কোনো ধরণের দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাসকে অডরেন্ট গ্যাস বলা হয়ে থাকে। নিশ্বাসের সাথে দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস মানুষ গ্রহণ করার পর হাইপার সেনসিটিভিটি সম্পন্ন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে এই সংখ্যা খুব কম। অনেক রকম দুর্গন্ধযুক্ত অনেক গ্যাস রয়েছে এখানে কোন গ্যাসটি মিশ্রিত করা হয়েছে সেটি জানা গেলে এটি মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর সে বিষয়টিও স্পষ্টভাবে ধারণা করা যেত।
তিনিও জানান, যে গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় এক ধরনের দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।