গণবাণী ডট কম:
ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে করে এসে দুই আসামীকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজিরা শেষে হাজতখানায় নেয়ার সময় পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে চার আসামির মধ্যে দু’জনকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। এসময় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ছিনিয়ে নেয়া দুই আসামীর একজনের নাম মোঃ আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। আরেকজনের নাম মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির। শামীমের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে আর সোহেলের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিত্যমারী উপজেলায়।
এ আসামীরা লেখক অভিজিৎ রায় ও জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।
আদালত সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মাদপুর থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আজ তাদের হাজিরা ছিল।
এদিকে দু’জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় রাজধানীর প্রতিটি থানা ও অন্যান্য ইউনিটকে চেকপোস্ট বসানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, দুই জঙ্গি সদস্য ছিনতাইয়ের পর পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। পাশাপাশি দেশজুড়ে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান হারুন উর রশীদ বলেন, গেট থেকে বের হওয়ার সময় দু’টা হোন্ডায় এসে, যারা এখানে অফিসাররা ছিল, তাদের মুখে স্প্রে করে চারজন জঙ্গি ছিল, তাদের মধ্যে দুইজনকে নিয়ে গেছে। আমরা ঢাকা শহরের সব জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়েছি। আমাদের ডিবি টিম আশেপাশের সব গলিতে চেক করছে। আশা করি, আমরা তাদের খুব শীঘ্রই গ্রেপ্তার করতে পারবো।
এই সময় সেখানে দুটি মোটরসাইকেল ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। জঙ্গিরা সেই মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে গেছে। ফলে পুরো বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত বলে তারা ধারণা করছে।
ঢাকার গোয়েন্দা প্রধান হারুন উর রশীদ বলেন, ‘’তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন টেকনিক ব্যবহার করে। এইবার তারা একটা নতুন টেকনিক, তারা সবার চোখে স্প্রে করে ওদেরকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করবো।‘’
‘’সবসময়েই আমাদের কাজ চলছে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গি- সবার বিরুদ্ধেই আমাদের কাজ চলছে। তবে আমরা মনে করি, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। সবাইকেই আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো,’’ তিনি বলেন।
এদের গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছিল, তারা তথাকথিত আনসার আল ইসলাম জঙ্গি দলের সদস্য। এই দুজনকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ একসময় পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল।
সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী বা জঙ্গিদের আদালতে আনা নেয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়। তাহলে এরকম ঘটনা কীভাবে ঘটলো?
পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ”দায়িত্বরত পুলিশের গাফিলতিতে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমরা মনে করছি। এই বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”
গত বছরের ১০ই ফেব্রুয়ারি জাগৃতি প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় আরও ছয়জনের সাথে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল এই দুইজনের।
আর এর ছয়দিন পরে ১৬ই ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় আরও চারজনের সাথে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল মোঃ আবু ছিদ্দিক সোহেলের।
উল্লেখ্য,প্রায় নয় বছর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহের আদালতে নেওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও ভালুকার মাঝামাঝি সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের প্রিজন ভ্যানে ঝটিকা আক্রমণ চালায় জঙ্গিরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলি হয়। গুলি ও বোমার আঘাতে আতিকুল সালাহউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮), জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজান (৩৫) ও হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসান (৩৫) নামের জেএমবির তিন শীর্ষ নেতাকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। তিনজনের মধ্যে সালাহউদ্দিন ও রাকিব মৃত্যুদণ্ড ও বোমা মিজান যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
পরে দিনই বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের তক্তারচালা এলাকা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসানকে আরও এক সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাতেই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি। বাকি দুজনকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ করে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ।