গণবাণী ডট কম:
নব্বইয়ের দশকে কথিত ধর্ষণের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন লেখক ই. জিন ক্যারল।
মামলার বাদী ক্যারল, যার বয়স এখন ৭৮ বছর, বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হওয়া অ্যাডাল্ট সারভাইভার্স অ্যাক্ট নামে নতুন একটি আইনের আওতায় নিউ ইয়র্কে এই মামলাটি দায়ের করেছেন। এ আইনে তিনিই প্রথম কোন মামলা করলেন।
তবে, ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইনে ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীরা এক বছরের মধ্যে যৌন নিপীড়নের মামলা দায়ের করতে পারেন। এরচেয়ে পরে হলে তা স্থানীয় আইনের সময়সীমা অতিক্রম করে যায়। যদি যৌন নিপীড়ন ঘটার সময় ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ বছরের বেশি হয় এবং ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটে যা বেশিরভাগ অপরাধের ক্ষেত্রে থাকা সময়সীমা অতিক্রম করে, তাহলে তারা অ্যাডাল্ট সারভাইভার্স অ্যাক্ট আইনে মামলা করতে পারেন।
যে অভিযোগ উঠেছে:
মিজ ক্যারল অভিযোগ করেছেন, ২৭ বছর আগে নিউইয়র্কের একটি বিলাসবহুল ডিপার্টমেন্ট স্টোরের ড্রেসিং রুমে তার ওপর যৌন হামলা হয়েছিল। নতুন এই আইনটি এই রাজ্যের সাম্প্রতিক শিশু নির্যাতন আইনের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে। এতে অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকার সময় নির্যাতনের শিকার হলেও, পরে তারা মামলা করতে পারেন।
নিউইয়র্কের শিশু নির্যাতন আইনটি ২০১৯ সাল থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগ দায়ের করার জন্য দু’বছরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।
ঐ আইনের অধীনে গির্জা কর্তৃপক্ষ, হাসপাতাল ও স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ১১ হাজার মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৯ সালে যখন প্রথমবারের মতো অভিযোগটি তোলা হয়, সে সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে মিথ্যুক বলার পর মিজ ক্যারল সাবেক রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলাও দায়ের করেছিলেন। ট্রাম্প ক্যারলের দাবিকে ‘কাল্পনিক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ঐ দেওয়ানি মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে ৬ই ফেব্রুয়ারি।
ক্যারলের আইনজীবি রবার্টা কাপলান একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ট্রাম্পকে তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী করার লক্ষ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার এই নতুন মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
ট্রাম্পের আইনজীবী আলিনা হাব্বা মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, নির্যাতনে শিকার ব্যক্তিরা সামনে এগিয়ে এলে তিনি তাদের সম্মান ও প্রশংসা করেন। তবে “দুর্ভাগ্যবশত, এই আইনের উদ্দেশ্যকে অপব্যবহার করার জন্য মামলাটি দায়ের করা হয়েছে,” এবং “এটা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বৈধ বিশ্বাসযোগ্যতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।”
নতুন আইন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে?
অ্যাডাল্ট সারভাইভার্স অ্যাক্ট আইন কার্যকর হওয়ার পর অন্যরাও মামলা করার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে নিউইয়র্ক-প্রেসবিটেরিয়ান এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সাথে সম্পর্কিত হাসপাতালের একজন প্রাক্তন গাইনোকোলজিস্ট রবার্ট হ্যাডেনের বিরুদ্ধে একটি ক্লাস অ্যাকশন মামলা, যার বিরুদ্ধে কয়েক ডজন রোগী যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন।
মি. ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন।
যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের পক্ষে আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, মানসিক আঘাত বা প্রতিশোধের ভয়ের কারণে আগে যারা অভিযোগ দায়ের করতে সাহস করেননি, নতুন এই আইন তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সুগম করবে।
দু’হাজার আঠারো সালে #MeToo আন্দোলন শুরু হওয়ার পর নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা এবং মন্টানাসহ অন্যান্য বেশ ক’টি অঙ্গরাজ্য যৌন অপরাধের সীমাবদ্ধতা সংক্রান্ত বিধানগুলো হয় প্রসারিত করেছে, নয়তো অস্থায়ীভাবে বাতিল করেছে।