গণবাণী ডট কম :
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আদালত থেকে জঙ্গি আসামী পালানোর ঘটনায় কারো গাফিলতি বা সংশ্লষ্টিতা থাকলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মন্ত্রী বলেন, জঙ্গিরা দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনা করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যেখানে আমাদের দুর্বলতা ছিল। সেই দুর্বলতার ফাঁক ফোকর দিয়ে এরা বেরিয়ে গেছে। এটা যথার্থই। সেজন্যই এই দুর্বলতাটা কে তৈরি করে দিল? কারা এর জন্য দায়ী? কাদের গাফিলতি আছে-সেটি খুঁজে বের করতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট এখনো আমাদের কাছে আসেনি। রিপোর্ট পেলে তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করব।
মন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬০তম কারারক্ষী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলনে ।
তিনি কারারক্ষীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কারা অভ্যন্তর হতে জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যাতে কোনরূপ সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালাতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। এছাড়া জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী বন্দীদেরকে কারাগার থেকে হাজিরার জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ এবং অন্য কারাগারে স্থানান্তরকালে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করবেন। শৃঙ্খলা ও মানবিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করবেন। কারা অভ্যন্তরে কোনভাবেই যাতে কারা বিধি বহির্ভূত নিষিদ্ধ দ্রব্য প্রবেশ না করতে পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
তিনি জানান, কারাবন্দীদের সংশোধনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে কারা আইনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ প্রিজন্স এ- কারেকশনাল সার্ভিস এ্যাক্ট- ২০২১’ প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কারাগারে বন্দী ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, জীবনমান উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করণার্থে বিভিন্ন মেয়াদী ৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং আরও কয়েকটি নতুন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারাগারে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ঢাকা ও ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগস্থ ৩২টি কারাগারে বিভিন্ন নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ ও স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল কারাগারে নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কারাগার ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে চলেছে। কারাগারে আটক বন্দিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশে ও বিদেশের শ্রমবাজারের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে দেশের ৩৮টি কারাগারে যুগোপযোগী ৩৯ ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল কারাগারকে এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। কারাগারে আটক কয়েদি বন্দীদের শ্রমে উৎপাদিত পণ্যে সামগ্রীর বিক্রয় লব্ধ অর্থ থেকে ৫০% লভ্যাংশ বন্দীদের মুজরি প্রদান করা হচ্ছে। যা বন্ধিরা তাদের পরিবারের নিকট প্রেরণ করতে পারছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা কারারক্ষীদের খাবারের মান উন্নত করা হয়েছে। কয়েদি পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মাসিক মজুরি বৃদ্ধি, কারাগারে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত ধর্মীয় উপদেষ্টাগণের দৈনিক সম্মানী বৃদ্ধি ও পবিত্র রমজান মাসে বন্দিদের ইফতারের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনা মহামারি মোকাবেলায় দেশের ৬৮টি কারাগারে আটক বন্দিদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে।
নবীন কারারক্ষীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষনার্থীবৃন্দ আপনারা মনে রাখবেন জনগণের অর্থে আপনাদের বেতন ভাতা দিয়ে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। তাই জনসেবাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জ্ঞান দ্বারা বিভিন্ন কারাগারে গিয়ে তা কার্যকরী করবেন। আদেশ পালনের ব্রত নিয়ে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে কারাগারে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা, বন্দীদের সাথে মানবিক আচরণ করা, বন্দীদের সংশোধন করাসহ যুগোপযোগী কারা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ কারা বিভাগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন বলে আমি আশা করছি।
এর আগে মন্ত্রী ৩০১ জন কারারক্ষীর অংশ গ্রহণে সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিভাদন গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে নবীন কারারক্ষী মধ্যে ৪ জন কারারক্ষীকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এরা হলেন,বেষ্ট ফায়ারার হিসেবে মেহেরপুর কারাগারের কারারক্ষী মো: ইমানুর রহমান শিপন, ড্রিলে প্রথম নরসিংদী জেলা কারাগারের কারারক্ষী মো. রনি দেওয়ান, পিটিতে প্রথম খাগড়াছড়ি জেলা কারাগরের কারারক্ষী মো. রবিউল ইসলাম এবং সর্ববিষয়ে চৌকুস নির্বাচিত হওয়ায় মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের কারারক্ষী মিন্টু ঘোষ।