গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর এলাকায় স্বামীকে তালাক দেয়ার কারণে প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পিতভাবে প্রাক্তন স্ত্রীকে হত্যার দায়ে ঘাতক স্বামীকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার বিকেলে জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণা করেন গাজীপুর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মমতাজ বেগম। রায় ঘোষণার সময় আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে শরিফুল (৪৫)। তিনি নীলফামারী জেলার সদর থানার রামকলা মৌলভীপাড়া এলাকার নুর আলমের ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জ এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় জিএসএম গার্মেন্টসের প্রিন্টিং শাখায় ডাইং ক্লিনারের কর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
নিহতের নাম মোহছেনা বেগম। তিনি রংপুর জেলার পীরগাছা থানার সৈয়দপুর গ্রামের মজিবুর রহমানের মেয়ে। তিনি গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জের রুহুল আমিনের বাড়ীতে ৩২ নং কক্ষে ভাড়ায় থেকে স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করতেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মোহছেনার সাথে শরিফুলের বিয়ের তিন বছর পর মোহছেনা জানতে পারেন শরিফুল আগে একটি বিয়ে করেছিল। এ নিয়ে তাদের সংসারে বনিবনা না হওয়ায় মহসেনা শরিফুলকে তালাক দেয়। এতে শরিফুল ক্ষিপ্ত হয়ে মোহছেনার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী শরিফুল ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর ভোরে মোহছেনার বসত ঘরে ঢুকে ঘরের দরজা আটকে মোহছেনাকে ধারালো বটি ও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনার সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলেও ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় উপস্থিত লোকজন কিছুই করতে পারেনি। পরে তারা ঘটনাটি মোহছেনার ভাই ও পুলিশকে জানায়। পরে খবর পেয়ে মোহছেনার ভাই সাদ্দাম হোসেন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বদ্ধ ঘরের দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করে। এসময় শরিফুল রক্তমাখা সার্ট গায়েসহ ঘরের দরজা খুলে বের হয়ে আসে। পরে পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করে। ঘর থেকে রক্তমাখা বটি ও ছুড়ি উদ্ধার করে। মরদেহের সুরতহাল তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সাদ্দাম হোসেন বাদী হয়ে শরিফুলকে একমাত্র আসামি করে গত ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর মহানগরীর কাশিমপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে আসামি শরিফুলের বিরুদ্ধে গত ২০২১ সালের ১০ মার্চ আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। বিজ্ঞ আদালতে চলতি বছরের ২২ মার্চ চার্জ গঠন হয়। পরে বিজ্ঞ আদালত ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও পরীক্ষা করে সরকারি কৌশলী ও আসামীর পক্ষের আইনজীবির যুক্তিতর্ক শেষে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর পুলিশ আসামীকে কারাগারে নিয়ে যায়।
আদালতে বাদী পক্ষে ছিলেন সরকারি কৌশলী এডভোকেট মোঃ মকবুল হোসেন কাজল এবং আসামীর পক্ষে ছিলেন এডভোকেট ফারহানা খানম।
রায় ঘোষণার পর অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন কাজল বলেন, গ্রেফতারের পর থেকে আসামী জেলখানায় ছিলেন। আসামী চাইলে আগামী ৭ দিনে মধ্যে উচ্চ আদালতে আপীল করতে পারবেন। আমরা রায়ে সন্তোষ্ট।