গণবাণী ডট কম:
ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
মিরপুরের শের ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ ভারতের করা ১৮৬ রানের জবাবে বাংলাদেশ তুমুল নাটকীয়তার পর নয় উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয়।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, যিনি শেষদিকে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের ত্রানকর্তা হয়ে উঠেন।
এটি ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ষষ্ঠ ওয়ানডে ম্যাচ জয়।
সবশেষ ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে ওয়ানডে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ।
শেষ সাত ওভারের নাটকীয়তা
ম্যাচের চল্লিশতম ওভারে যখন হাসান মাহমুদ আউট হয়ে যান মোহাম্মদ সিরাজের বলে, তখন স্টেডিয়ামের বাইরে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সমর্থকদের লাইন লেগে যায়।
এই ম্যাচ থেকে আর কোনও আশা খুঁজে পাচ্ছিলেন না অনেকেই।
ম্যাচ যখন শেষ হবে হবে, তাদের অনেকে স্টেডিয়ামে পুনরায় ঢোকার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু একবার মূল ফটক থেকে বের হলে আর ঢোকার উপায় নেই।
ততক্ষণে মুস্তাফিজুর রহমানকে সাথে নিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ ৫০ রানের একটি জুটি গড়ে ফেলেছেন।
এই দুজনের ৫১ রানের অপরাজিত জুটি শেষ উইকেটে ওয়ানডে ক্রিকেটে সফল রান তাড়ার ম্যাচে চতুর্থ সর্বোচ্চ জুটি।
মুস্তাফিজুর রহমান ৩৯ ওভার পাঁচ বলে একটি চার মারেন, এটি ছিল ১০৫ বল পরে বাংলাদেশের প্রথম চারের মার। এখান থেকেই শুরু হয় ধীরে ধীরে লক্ষ্যে পৌঁছানোর কাজ। তখনও শেষ উইকেট হাতে নিয়ে বাংলাদেশের ৪৭ রান প্রয়োজন ছিল।
পরের ওভারে ব্যবধান আরও কমিয়ে আনেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তিনি দুই ছক্কা হাঁকান অভিষিক্ত ভারতীয় পেস বোলার কুলদীপ সেনের বলে।
এরপর মিরাজ চেষ্টা করেন মুস্তাফিজকে যতটা সম্ভব কম স্ট্রাইক দেয়ার। প্রতি ওভারে চার, পাঁচ কিংবা ছয় নম্বর বলে এক রান নিয়ে প্রান্ত বদল করার চেষ্টা করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
৪৩তম ওভারে দীপক চাহারের বলে তিনটি চার মেরে খেলার আমেজ বদলে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এর আগ পর্যন্ত দীপক চাহারের বোলিং ফিগার ছিল, ৬ ওভারে ৯ রান এক উইকেট।
হুট করেই তিনি এক ওভারে একটি নো বল সহ ১৫ রান দেন, তবে এই ওভারে মিরাজ শেষদিকে এক রান নিতে পারেননি ফলে পরের ওভারে প্রথম বল থেকে মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন স্ট্রাইকে। কিন্তু তাতে ভারতের তেমন সুবিধা হয়নি।
বরং মুস্তাফিজুর রহমান লেগ সাইডে গ্ল্যান্স করে একটি চার আদায় করেন শারদুল ঠাকুরের বল থেকে।
শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল আট রান।
মিরাজ ও মুস্তাফিজ এক ওভারেই নিয়ে নেন প্রয়োজনীয় রান।
বাংলাদেশ মূলত ভুগেছে রিয়াদ-মুশফিকের ব্যাটিংয়ে
মিরপু্রে ১৮৭ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশের জন্য সহজই হওয়ার কথা।
কিন্তু ম্যাচের ২৩তম ওভারে সাকিব আল হাসান ২৯ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ১০ ওভার ব্যাট করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম ৩৩ রান তোলেন।
এখানেই বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটা কঠিন হয়ে যায়। মুশফিক ব্যাটের কোণে লাগিয়ে স্ট্যাম্পে টেনে এনে বোল্ড আউট হয়ে যান। ৪৫ বল খেলে ১৮ রান তোলেন মুশফিকুর রহিম।
রিয়াদ ৩৫ বলে ১৪ রান তোলেন।
দুজন মিলে ৩২ রান তোলেন ৮০ বল খেলে।
ভারতের টপ অর্ডারকে নিজেদের মতো খেলতে দেয়নি বাংলাদেশ
রোহিত শর্মা ২৭, শিখর ধাওয়ান ৭, ভিরাট কোহলি ৯ ও শ্রেয়াস আইয়ার ২৪।
ভারতের টপ অর্ডারের সেরা চারজন ব্যাটসম্যানের কেউই ৩০ রানও স্পর্শ করতে পারেননি।
ম্যাচের দশম ওভারে বল হাতে নিয়ে সাকিব আল হাসান রোহিম শর্মাকে বোল্ড করেন আর্ম বলের ফাঁদে ফেলে, একই ওভারে ভিরাট কোহলিকে আউট করেন দারুণ ক্যাচ নেন অধিনায়ক লিটন দাশ।
এখানেই মূলত বাংলাদেশ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধীরে ধীরে নিজেদের করে নেয়। ভারত এমন এক টপ অর্ডার নিয়ে বাংলাদেশে খেলতে এসেছে যারা বিশ্বের যে কোনও ফরম্যাটেই বোলারদের জন্য ভীতিকর হয়ে উঠতে পারেন।
কিন্তু আজ এই টপ অর্ডার ব্যর্থ হয়েছে।
ভারত ১৭টি অতিরিক্ত রান দিয়েছে
ভারত একটি অনভিজ্ঞ ফাস্ট বোলিং লাইন আপ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।
দীপক চাহারের এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভালো বোলিং এর ইতিহাস আছে কিন্তু আজ শুরু আর শেষে তিনি তাল মেলাতে পারেননি।
দীপক দুটি নো বল দিয়েছেন, যা শেষদিকে ভারতের জন্য নেতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া ভারতের বোলাররা ৬টি ওয়াইড বল দিয়েছেন। ছয়টি বাড়তি বল, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়া বাংলাদেশের ৮টি রান এসেছে বাই থেকে।
সাকিব আল হাসান ছিলেন দুর্দান্ত
সাকিব আজ আরও একবার প্রমাণ করেছেন কেন তিনি বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন।
বল হাতে এসেই তিনি প্রথম ওভারে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছেন।
এরপর ব্যাট হাতে করেছেন ২৯ রান।
যদিও মেহেদী হাসান মিরাজের শেষদিকের ভূমিকার কারণে তিনি ম্যাচসেরার পুরস্কার পাননি। কিন্তু সাকিব এই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন শুরু থেকে।
১০ ওভারে ২টি মেইডেন দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব, ৩৬ রান দিয়েছেন তিনি।
এটি সাকিবের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ পাঁচ উইকেট শিকার।