গণবাণী ডট কম:
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ওই দুই নেতাকে তাদের নিজ নিজ বাসভবন থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ করে তাদের পরিবারের সদস্যরা। পরে পুলিশ জানায় যে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।
ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণ-সমাবেশের একদিন আগে এই গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলো।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশিদ বলেছেন , দুদিন আগে নয়াপল্টনে যে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সে বিষয়ে তাদের কাছে কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।
তিনি বলেন, “আমরা কিছু বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাকি অবস্থা বলতে পারবো। দুদিন আগে নয়াপল্টনে যে পরিস্থিতি হয়েছে, সেখানে আমাদের ৫০ জনের মতো পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।”
এর আগে দলটির প্রেস-উইং এর সদস্য শায়রুল কবির খান এবং ওই দুই নেতার পরিবারের সদস্য তাদের ‘আটক’ হওয়ার এই খবরটি নিশ্চিত করেন।
শায়রুল কবির খান জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একাধিক সদস্য মির্জা আলমগীরের উত্তরার বাসভবনে এবং মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসভবনে যান এবং তাদেরকে আটক করে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, “পুলিশ বলেছে তাদেরকে নাকি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে আটক করা হয়েছে।”
মির্জা আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, রাত তিনটার দিকে ডিবির ৪ জন সদস্য তাদের ফ্ল্যাটে এসে তার স্বামীকে আটক করে নিয়ে যান। নীচে আরও অনেকে ছিলেন।
মিসেস রাহাত বলেন, আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে উনাকে কিসের ভিত্তিতে আটক করা হচ্ছে। তখন ডিবি সদস্যরা বলেছে নতুন মামলা দায়ের হয়েছে। সেটার জন্য। কিন্তু কী মামলা, কারা দায়ের করেছে কিছুই বলেনি। শুধু বলেছে উপরের নির্দেশ আছে।”
রাত থেকেই তার বাসার নীচে পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, তাকে পুলিশ জানিয়েছে যে কিছু সময় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার স্বামীকে ছেড়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, “আমাকে রাতে সে ডেকে বলল যে আমাকে ডিবি নিয়ে যেতে এসেছে। আমি তো বিশ্বাস করিনি। পরে ডিবির সদস্যরা আমাকে বললেন উনাকে নিয়ে গেলাম, উনার সাথে কথাবার্তা বলে আমরা আবার দিয়ে যাবো। আমি বললাম তাহলে এখানেই কথা বলেন। তখন বলল, না উনাকে আমাদের অফিসে নিয়ে যেতে হবে।”
ঢাকায় ১০ই ডিসেম্বর বিএনপির গণ সমাবেশকে সামনে রেখে বেশ কিছুদিন ধরেই সমাবেশস্থল নিয়ে দলটির সাথে সরকারের বাদানুবাদ চলে আসছিল।
বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে এক প্রকার অনড় অবস্থায় থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে বার বার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নাহলে পূর্বাচলে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার কথা বলে আসছে।
এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার রাতে দুই পক্ষ সমাবেশস্থল নিয়ে সমঝোতায় এসেছে বলে আভাস পাওয়া যায়।
এরমধ্যেই গ্রেফতারের এই ঘটনা পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপির কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বৈঠকের পর বিকল্প সমাবেশস্থল হিসেবে কমলাপুর স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজের মাঠের বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিএনপি মূলত কমলাপুর স্টেডিয়াম এবং পুলিশের পক্ষ থেকে মিরপুর বাঙলা কলেজের মাঠে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা একমত হতে পারেনননি।
পরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশের প্রধান উপদেষ্টা মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল সমাবেশস্থল পরিদর্শন করে।
এ নিয়ে সাংবাদিকদের মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দুইটা মাঠ দেখেছি। স্থায়ী কমিটির সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবো। কোথাও নিরাপদ নয় বিএনপি কর্মীরা। সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আমাদের প্রস্তুতি আছে তবে মারামারি করার প্রস্তুতি নেই।’
এর আগে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে লম্বা বৈঠক করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ওই দুটি স্থান পরিদর্শনের কথা জানান।
বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা সমাবেশস্থল হিসেবে দুটি জায়গা পরিদর্শন শেষে বাড়ির ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের আটক করা হয় বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে বিএনপির সমাবেশের জন্য গোলাপবাগ মাঠ পরিদর্শন করেছেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি সমাবেশের জন্য মাঠটিকে আপাতত উপযুক্ত বলে মনে করছেন।
এর নিরাপত্তার দিকটি আরও যাচাই করে অনুমতি দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
খবর : বিবিসি ও অন্যান্য সূত্র।