গণবাণী ডট কম:
অনেক উত্তাপ ছড়িয়ে আর অনেক মূল্য দিয়ে অবশেষে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবী জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। শনিবার গণসমাবেশ থেকে দলের পক্ষে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শীর্ষস্থানীয় নেতারা কারাগারে থাকায় তিনি এই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। এ নিয়ে টান টান উত্তেজনার মধ্যে পল্টনে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, দলীয় কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান,একজন নিহতসহ কয়েকশত নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়। এর জের ধরে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ঢাকার সমাবেশের দায়িত্বে থাকা স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাসসহ সিনিয়র কয়েক নেতাও গ্রেফতার হন। অনেক নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত পুরনো ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকার গোলাপবাগ মাঠে বিএনপি সমাবেশ করে।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিসহ ১০ দফা ঘোষণা করেছেন।
এ সময় বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার নেতা কর্মীদের মুক্তি ও হত্যার প্রতিবাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর সব মহানগর ও জেলায় গণমিছিল ও বিক্ষোভ করবে বিএনপি। আর ২৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে ১০ দফা দাবি আদায়ে প্রথম কর্মসূচি হিসেবে গণমিছিল করা হবে।
একইসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য বিরোধীদলগুলো তাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে একই দাবি ঘোষণা করবে।
বিএনপির ১০ দফা হলো:
১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ’-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।
৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দীদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার না করা।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।
৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।