গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার সিকদার পাড়া এলাকার শুকুর শিকদারের বাড়িতে রহস্যজনকভাবে আগুনে পুড়ে স্বামী-স্ত্রী মারা গেছেন। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেছে জিএমপির কোনাবাড়ী থানা পুলিশ। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহতরা হলেন, নীলফামারীর ডিমলা থানার ভাঙ্গারহাট গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আবু সুফিয়ান (৩৮) ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার (৩০)। তারা মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার সিকদারপাড়া এলাকার শুকুর শিকদারের মালিকানাধীন ছয়তলা ভবনের নিচতলায় ভাড়া থাকতেন। আবু সুফিয়ান দৈনিক ভিত্তিতে যখন যেখানে সুযোগ পেতেন কাজ করতেন। আর নাসরিন স্থানীয় একটি কারখানায় অপারেটর পদে চাকরি করতেন।
এই দম্পতির ১২ বছর ও ২ বছর বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে নাফিস (১২) স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় থেকে পড়াশুনা করে। অপর সন্তান নীলফামারীতে নানীর কাছে থাকে। ঘটনার সময় তারা কেউ ঘরে ছিল না। এ দম্পতির মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আগুনে পুড়ে মারাগেছে না আত্মহত্যা করেছে, না এটি কোন নাশকতা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবর পেয়ে শনিবার সকালে মাদ্রাসা থেকে মা বাবাকে দেখতে আসে নাফিস। ঘরের ভিতর তার বাবা মার নিথর দেহ কাপড়ে ঢাকা। এসময় সে কাঁদতে কাঁদতে জানায়,মা কারখানায় ও বাবা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন। তারা দুজনেই তার সকল আব্দার পুরন করার চেষ্টা করতেন। শুক্রবার সে তাদের সাথে সময় কাটিয়ে রাতে মাদ্রাসায় চলে গিয়েছিল।
নিহত নাসরিনের বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক কিছুটা বিরোধ তাদের মধ্যে ছিল। তবে এমন বড় ঘটনা ঘটনোর মত বিরোধ তাদের মধ্যে ছিলনা। তবে এটা দুর্ঘটনা না আত্মহত্যা এবিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
বাড়ীর নিরাপত্তা প্রহরী আল আমিন জানান, শনিবার ভোর ৫টার দিকে নিহতদের ঘর থেকে ধোয়া বের হতে দেখে তিনি অন্যদের সহায়তায় ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতেরে প্রবেশ করে পানি দিয়ে আগুন নেভান। পরে বিছানায় স্বামী স্ত্রীর মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশে খবর দেয়া হয়।
জিএমপির কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আশরাফ উদ্দিন জানান, ছয়তলা ভবনের নিচতলাতে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন আবু সুফিয়ান ও নাসিরিন দম্পতি। বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী শনিবার ভোরে নিচতলার ফ্ল্যাট থেকে আগুনের ধোয়া দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের খবর দেয়। পরে তারা সকলে ভিতর থেকে বদ্ধ ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে গিয়ে পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে খাটের ওপর থেকে স্ত্রী ও ফ্লোরে থাকা স্বামীর মরদেহ উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তিনি আরো জানান, তাদের মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যজনক। তারা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন, না মৃত্যৃর পর আগুন লেগেছে, এ ঘটনায় কোনো নাশকতা রয়েছে কি না তা আমরা খতিয়ে দেখছি। তদন্ত শেষে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) আবু তোরাব মো: ছামসুর রহমান বলেন, ঘরের ভিতর খাটের ওপর ছিল মহিলার মরদেহ। তার শরীরের নীচের অংশ আগুড়ে পুড়ে গেছে। গলায় হালকা দাগ রয়েছে। আর ঘরের মেঝেতে ছিল স্বামীর মরদেহ। তাদের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে, তারা আগুনে পুড়ে মারাগেছে না আত্মহত্যা করেছে, না এটি কোন নাশকতা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।