গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন মালেকের বাড়ী এলাকায় চায়না নাগরিকের মালিকানাধীন একটি তৈরী পোশাক কারখানায় প্রতিশ্রুত বেতনের অর্ধেক পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা মালিকসহ কর্মকর্তাদের ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বকেয়া বেতনের ২৫% পরিশোধ করার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,মহানগরীর মালেকের বাড়ী এলাকায় চায়না নাগরিক মিসেস তান কিউ গ্রেস টিউক’ এর মালিকানাধীন টেক্সটিল ফ্যাশন লি: নামক কারখানাটিতে ৫২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এ কারখানার শ্রমিকদের গত নভেম্বর/২০২২ খ্রীঃ মাসের বেতনের ৫০% (অর্ধেক) পরিশোধ বকেয়া রয়েছে। বৃহষ্পতিবার মালিকপক্ষ বকেয়া বেতন পরিশোধ করার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মালিক পক্ষ বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বকেয়া বেতন পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা অসন্তোষ্ট হয়ে ওঠে। পরে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ৫০% বকেয়া বেতনের মধ্যে ২৫% পরিশোধ করার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে ফ্যাক্টরীর ভেতর হট্টগোল শুরু করে। মালিক পক্ষ শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু শ্রমিকরা বেতন না নিয়ে ফিরবে না বলে ফ্যাক্টরিতে দৃঢ় অবস্থান নেন। এসময় মালিকসহ ম্যানেজমেন্ট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ কারখানার ভিতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে মহানগর পুলিশ, শিল্প পুলিশ, কলকারখানা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।
এসময় শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা করা হলেও শ্রমিকরা বেতন না নিয়ে ফিরবে না বলে ফ্যাক্টরিতে অবস্থান নেন। এদিকে ফ্যাক্টরির মালিক মিসেস তান কিউ গ্রেস টিউক’ও (চায়না নাগরিক) বৃহস্পতিবার ২৫% এর বেশি বেতন পরিশোধ করবেন না মর্মে অনড় থাকেন।
পুলিশ জানায়, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফ্যাক্টরির অপারেটর ও শ্রমিক নেত্রী শীমা খাতুন ফ্যাক্টরি মালিকের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ঐ নারী শ্রমিককে মারতে উদ্যত হন। বিষয়টি অন্যান্য সাধারণ শ্রমিকরা দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং মালিককে আক্রমণ করার জন্য চেষ্টা চালায়। কিন্তু ঘটনাস্থলে পূর্ব হতে উপস্থিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাকে ইত্তেজিত শ্রমিকদের আক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে।
গোপন সূত্রে জানা যায় যে, তিনি প্রায় সময় ম্যানেজমেন্ট ও শ্রমিকদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকেন, কোনো বাঙালি লোককে বিশ্বাস করেন না, এমনকি তিনি বাঙালি শ্রমিক, স্টাফ ও ম্যানেজমেন্টের লোকজনকে আলী বাবা বলেও আক্ষায়িত করে থাকেন। ফ্যাক্টরিটিতে শ্রমিকদের বেতন নিযে দীর্ঘদিন যাবত নিয়মিত সমস্যা হয়ে আসছে। প্রায় প্রতি মাসেই বেতন পাবার জন্য শ্রমিকদেরকে ম্যানেজমেন্টের সাথে এ ধরণের পরিস্থিতির মুখমুখি হতে হয়।
এ বিষয়ে গাজীপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক মোঃ জালাল খান জানান, ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা সম্পূর্ণ বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত ফ্যাক্টরির মালিক এ সিনিয়র ম্যানেজমেন্টকে ফ্যাক্টরি থেকে যেতে দিবে না বলে কক্ষের বাইরে অবস্থান নেয়।পরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে আজকে রাতে বকেয়া বেতনের ২৫% ভাগ বাকী টাকা আগামী ১২ জানুয়ারি পরিধোধ করার শর্তে শ্রমিকরা মেনে নেয়।
জিএমপির গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ইব্রাহিত হোসেন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে মানানোর চেষ্টা করা হয়। পরে আলোচনার পর রাত ১০টার দিকে কারখানার শ্রমিকরা নভেম্বর/২২ মাসের বকেয়া বতনের ২৫% বেতন নিয়ে রাজি হয়েছে। পরে ৫২০ জন শ্রমিক রাতেই ধীরে ধীরে তাদের বকেয়া বেতনের ২৫% টাকা নিয়ে কারখানা ত্যাগ করতেছে। বাকি ২৫% বেতন আগামী ১২ জানুয়ারী পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।