গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রিয় কারা কমপ্লেক্সের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বাড়তি কম্বলসহ বিভিন্ন দাবিতে কতিপয় বন্দির বিক্ষোভ ও খাদ্য গ্রহণে অস্বীকৃতির ঘটনার পর রোববার ডিআইজি প্রিজন্স এ কে এম ফজলুল হক কারাগার পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি কারাগারের বন্দিদের সাথে কথা বলেছেন ও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কাশিমপুর কারাগারের হাই সিকিরিউরিটি কারাগারে বিভিন্ন মামলার দুর্ধর্ষ আসামী, জেএমবি সদস্য ও হুজি সদস্য, সন্ত্রাসী বন্দি রাখা হয়। কারাবিধি অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টাই তাদের লকআপে থাকার কথা। তারপরও সেখানে বন্দি কতিপয় জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সদস্য কারাগারের নির্ধারিত কক্ষের সামনের বারান্দা পর্যন্ত চলাচল করতে পারেন। কিন্তু তারা কারাচত্বরের ভেতরে সাধারণ বন্দিদের মতো খোলামেলাভাবে ঘোরাঘুরি করা, অন্য বন্দিদের সঙ্গে একত্রে মেলামেশা করা, বাইরে থেকে স্বজনদের সরবরাহ করা বিদেশি কম্বল ব্যবহার, প্রতি সপ্তাহে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ফোনে কথা বলাসহ নানা দাবি তুলে গত শনিবার সকালের নাস্তা গ্রহণে অস্বীকার করে। পরে কর্তৃপক্ষ তাদের বুঝিয়ে শান্ত করলে তারা খাবার গ্রহণ করে। একইভাবে রবিবার দ্বিতীয়দিনেও তারা নাস্তা গ্রহণ করেননি কয়েকজন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী। পরে কর্তৃপক্ষ জেলকোড মেনে চলার জন্য তাদের বুঝিয়ে শান্ত করলে বেলা ১১টার দিকে নাস্তা করেছেন বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের সঙ্গে কারাগারের অন্য কোনো বন্দি অংশ নেননি।
এদিকে এসব বিষয়ি নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মত রবিবারেও অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির পক্ষ থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট হোয়াটসআ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে বিভিন্ন দাবী আদায়ে কতিপয় বন্দির অনশনের তথ্য জানানো হয়। কিন্তু এসব নাম্বারে ফোন করে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বন্দিদের অনশনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, এ কারাগারে বিভিন্ন মামলার দুর্ধর্ষ আসামী, জেএমবি সদস্য ও হুজি সদস্য, সন্ত্রাসী বন্দি রয়েছে। কারা-বিধির বাইরে বাড়তি সুবিধার দাবিতে শনিবার সকালের নাস্তা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। কিন্তু রবিবার কারাগারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। কোন সমস্যা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী, বন্দিদের সব সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু কারাবিধি বা আইনের বাইরে বন্দিদের জন্য কোনোকিছু করার নিয়ম বা সুযোগ নেই। জঙ্গি সদস্যদের তাদের ইচ্ছামতো চলতে দিলে যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বরিবার ডিআইজি প্রিজন্স এ কে এম ফজলুল হকের কারাগার পরিদর্শনের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, তিনি নিয়মিত পরিদর্শনের অংশ হিসাবে এসেছিলেন। কারাগার পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি কারাগারের কয়েকজন বন্দির সাথে কথা বলেছেন। তিনি কারা কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। এসময় তিনি কারাগারের নিরাপত্তা ও শৃংখলা বঝায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
কারাগারের এসব বিষয় নিয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান বলেন, আমি কারাগারের বন্দিদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছি। তাদের প্রত্যেককে ৪/৫টি করে কম্বল দেয়া হয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী তারা সবরকম সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। শীতে কষ্ট পাওয়ার দাবীটি তাদের মূল ইস্যু নয়। তারা এসব দাবী তুলে কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এসব প্রচারনায় কারাগারের কেউ জড়িত থাকতে পারে। তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে কাশিমপুর কারাগারের কিছু অনাকাংখিত বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। এসব বিষয় কারা ঘটাচ্ছে, কি তাদের উদ্দেশ্য,এসবের সাথে কারা জড়িত আমরা অনুসন্ধান করছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।