গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা এলাকায় আটক এক আসামি স্বজনেরা জিম্মায় ছাড়িয়ে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মৃত্যু হয়। এঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার সকালে বিক্ষোভ, ভাঙচুর, মহাসড়ক অবরোধ, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মৃত্যুবরণকারী যুবকের নাম রবিউল ইসলাম (৪০)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা বাইপাস পেয়ারা বাগান এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে সুতার ব্যবসা করতেন। তিনি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার শাহজাদপুর গ্রামের আব্দুল বাকীর ছেলে।
গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন ভোগড়া পেয়ারা বাগান এলাকার থেকে সুতা ব্যবসায়ী রবিউলকে অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রবিউলের প্রতিবেশী স্বপন খানসহ স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অনলাইনে বিট কয়েন দিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগে শনিবার রাতে চারজনকে আটক করে জিএমপির বাসন থানার পুলিশ। পরদিন তিনজনকে ছেড়ে দিলেও ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে পুলিশ ছাড়েনি। মঙ্গলবার রাতে রবিউলের স্বজনেরা জানতে পারেন রবিউল মারা গেছেন।
বুধবার সকালে এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী লাঠি সোটা নিয়ে সকাল ১০টার দিকে প্রথমে বাসন থানার সামনে থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে তারা ভোগড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। বিক্ষোভকারীরা অভিযুক্ত পুলিশের বিচার দাবি করেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়, কয়েকটি ভাংচুর চালায়। এ সময় তারা ভোগড়া পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। এসময় মহাসড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে প্রায় এক ঘন্টা পর বেলা ১১ টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ ঘটনায় বিস্তারিত জানার জন্য বুধবার সকালে রবিউলের ভাড়া বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এসময় প্রতিবেশীরা পুলিশের হেফাজতে রবিউল মারাগেছে বলে দাবী করেন। তবে, রবিউলের কোন স্বজন বা তাদের পক্ষে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।
ভোগড়ায় আগুনে পোড়া পুলিশ বক্সের পাশের একটি হোটেলের মালিক সামসু জানান, সকালে শতাধিক লোক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসে। তারা সড়ক অবরোধ করে দুটি মোটর সাইকেলে ও পুলিশ বক্সে আগুন দেয়। তাদের অধিকাংশ যুবক বয়সী ও অটোরিক্সার চালক। পরে পুলিশ গুলি ছুড়ে সড়কে গাড়ী চলাচল স্বাভাবিক করে।
জিএমপির বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক খসরু খান বলেন, গেল মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাতে অনলাইন জুয়া খেলার সাথে জড়িত সন্দেহে এক আসামিকে জিএমপির বাসন থানার এএসআই মাহবুব ও নুরুল ইসলাম আটক করে। পরে রাতে তার দুই অভিভাবক থানায় এসে আর এ ধরনের অপরাধ করবে না মর্মে অঙ্গীকার করলে তাকে ওই স্বজনদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। পরে থানা থেকে রাতে বাসায় ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে অজ্ঞাত একটি ট্রাক তাদের ধাক্কা দিলে রবিউল ও এমারত আহত হয়। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে রবিউলের মৃত্যু হয়। অপরজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা সড়কে ভাঙচুর, বিক্ষোভ ও অগ্নি সংযোগ করেছে। পুলিশ হেফাজতে কিংবা পুলিশের নির্যাতনে কারো মৃত্যু হয়নি।
তিনি আরো জানান, রবিউলের ছোট ভাই মো: মহিদুল ইসলাম ঢাকার শাহবাগ থানায় মরদেহ বিনা ময়তাতদন্তে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। ঐ আবেদনে তিনি তার ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। এসময় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা: মো: মহিউদ্দিন শরিফের স্বাক্ষর করা একটি মৃত্যুর সনদপত্র দেখান, যেখানে মৃত্যুর কারণ হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনা লেখা রয়েছে।
এসব বিষয়ে রবিউলের ছোট ভাই মো: মহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, তিনি তার ভাইয়ের মরদেহ নেয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেলে আছেন। তিনি লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই নিয়ে যেতে চান। তার ভাই কিভাবে মারাগেছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ভাইকে ছাড়ানোর জন্য এক প্রতিবেশী এমারতসহ থানায় যাই। সেখান থেকে ছাড়ানোর পর বাসায় ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় তার ভাই ও এমারত আহত হয়। পরে তার ভাই মারা যায়।
জিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর)আবু তোরাব মোঃ সামসুর রহমান জানান, বাসন থানায় একজন আসামীকে গ্রেফতারের পর স্বজনদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। থানা থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথে একটি ট্রাকের ধাক্কায় তাদের দুজন আহত হয়। পরে আহতদের মধ্যে রবিউল মারা যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু লোকজন বাসন থানা এলাকায় একটি পুলিশ বক্স, দুটি মোটরসাইকেল অগ্নি সংযোগও কয়েকটি গাড়ী ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় বিক্ষোভকারীদের হামলায় জিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আলমগীল হোসেন ও একজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন,একজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি দু:খজনক। কিভাবে মৃত্যু হলো এ ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন, জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো: দেলোয়ার হোসেন, সদস্য হলেন উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর)আবু তোরাব মোঃ সামসুর রহমান ও অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) খায়রুল ইসলাম। তদন্তে আমার পুলিশ বাহিনীর কারো কোন গাফিলতি পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না।