গণবাণী ডট কম:
তাবলীগ জামাতের মাওলানা সাদ অনুসারীদের অংশগ্রহণে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে। এপর্বের মুসুল্লীদের সেবার জন্য সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে তাবলিগের মুরুব্বীগণ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর ১০ হাজারের অধিক সদস্য দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,গত বুধবার বিকেল থেকেই দেশের প্রতিটি জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। এ পর্বে ইজতেমা ময়দানকে ৬৪ জেলার মুসুল্লিদের জন্য ৮৫টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, ট্রাক, কার, পিকআপ ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে দলে দলে মুসুল্লিগণ গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ইজতেমা ময়দানে এসে পৌছেছেন। তারা কাঁধে-পিঠে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে ইজতেমাস্থলে এসে নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। চারদিনের ব্যবধানে আবারও মুসুল্লীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠেছে ইজতেমা ময়দান ও তার আশপাশ। ময়দানের ভিতরে চলছে বয়ান জিকির তালিম আর মাশোআরা।
সাদপন্থিদের ইজতেমা আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম সমন্বয়কারী মো. সায়েম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নব্বইটি দেশের প্রায় পাঁচ হাজার মুসল্লী ময়দানে অবস্থান করছেন। এপর্বে অংশ নিতে মাওলানা সাদ পূত্র মাওলানা ইউসুফ, মালানা সাঈদ, মাওলানা ইলিয়াস, জামাতা মাওলানা হাসান ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন।
তিনি আরো জানান, ময়দানে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবারের বাদ যোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ফারুক।সেটি বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফ আলী। বাদ আসর পাকিস্তানের মাওলানা হারুন কুরাইশী উর্দুতে বয়ান করেন বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মনির ও বাদ মাগরিব তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন আব্দুল্লাহ।
ইজতেমা অংশ নিতে মেহেরপুর জেলা থেকে মোহাম্মদ আল ইমরান দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে ৩৯জন চিল্লা সাথী নিয়ে ময়দানে এসেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ময়দানে এসে পৌঁছেছি। আমরা তিন চিল্লার সাথীদের নিয়ে ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে মুরব্বিদের ইমানী কথা শুনছি।
শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা ওসমানের বয়ানের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করবেন জিয়া বিন কাশিম। সকাল দশটায় তালিম করবেন মাওলানা ইউসুফ। তাঁর বয়ান বাংলায় তর্জমা করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে জুমার নামাজের বৃহত্তম জামাত।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বে প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য চারপাশে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। গত পর্বের অভিজ্ঞতা রয়েছে পুলিশের। প্রথম পর্বের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে আরো আরো শতর্ক অবস্থানে থাকবে। নিরাপত্তার জন্য সাদা পোশাকে নজরদারী ও প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারীর উপর জোর দেয়া হয়েছে। ডিএমপির বোম্ব পিসপোজেল টিম, সোয়াট টিম, বিজিবি, পুলিশ, র্যা ব, আনসার সদস্য, সিসি টিভি, ওয়াচ টাওয়ার, রুফটপ থেকে মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ, আগত মুসুল্লীদের লাগেজ ও দেহ বোতল্লাশী, সাদা পোশাকে নিরাপত্তার বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারী থাকবে।
উখিয়া রোহিঙ্গা কেম্প থেকে মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নিতে পারেন এমন প্রশ্নে কমিশনার বলেন,রোহিঙ্গাদের ইজতেমায় অংশ নেবার কোন সুযোগ নেয়। ময়দানে রোহিঙ্গা মুসল্লি ময়দানে এসেছেন এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন ইজতেমার সার্বিক কর্মকাণ্ড সমন্বয় করছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজতেমার মুরুব্বীদের চাহিদা মতো সকল সহযোগিতা দিচ্ছি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, প্রথম পর্বের পরে আমরা ময়দান থেকে সকল আবর্জনা ও বর্জ্য অপসারণ করেছি। ইজতেমার মুরুব্বীদের চাহিদা মতো সকল প্রকার সংস্কার ও মেরামত কাজ করা হয়েছে। দৈনিক ৩ কোটি লিটার পানি, ৫০ হাজার মিটার বৈদ্যুতিক তার দিয়ে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থাসহ সকল প্রয়োজন পুরণে আমরা সচেষ্ট আছি।