গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মাধ্যমে তাবলীগের মাওলানা সাদ অনুসারী লাখ মুসুল্লির অংশগ্রহণে কড়া নিরাপত্তায় শুরু হয়েছে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। সকালে ইজতেমায় আনুষ্ঠানিকভাবে আরবি ও উর্দূতে বয়ান করেন মাওলানা ওসমান আলী। আম বয়ানের বাংলায় তর্জমা করেন জিয়া বিন কাশিম। সকাল দশটায় তালিম করেন মাওলানা ইউসুফ। তাঁর তালিমের বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।
এদিন ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজের জামাত। এ নামাজে প্রায় ৮ লাখ মুসুল্লি অংশ নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ পর্বে পুরো ময়দানকে ৬৪ জেলার মুসুল্লিদের জন্য ৮৫টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ইজতেমায় আগত মুসুল্লিগণ ময়দানের ভিতরে অবস্থান নিয়েছেন। জ্যৈষ্ঠ মুরুব্বিরা আগত মুসুল্লিদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভাষায় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশিত ইসলামী বিধানের উপর দিক নির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করছেন। সকাল দশটা থেকেই গাজীপুর জেলা ও তার আশপাশের এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বৃহৎ জুমায় অংশ নিতে ময়দানে আসতে শুরু করেন। আশপাশের এলাকা থেকে নামাজে যোগ দিতে লাখো মুসল্লি দুপুরে আগেই ময়দানে প্রায় প্রতিটি খিত্তায় ও ময়দানের চারপাশের সড়কে অবস্থান নেন। ময়দানের মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমাস্থলে হাজির হয়েছেন। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের দিকে ছুটে আসেন জুমার নামাজ আদায় করার জন্য। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও বাড়ির ছাদে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ছাদে, অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। ময়দানের বাইরে কিছু এলাকায় মাইক সংযোগ না থাকায় মুসুল্লিদের জুমার নামাজ আদায় করতে অসুবিধা হয়েছে।
জুমার নামাজের ইমামতি করেন নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা সাদ কান্ধলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী।
ইজতেমার মূল বয়ান মঞ্চ থেকে জুমার নামাজ শেষে ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি ওয়াসিফুল ইসলাম বয়ান করেন। বাদ আসর ভারতের মাওলানা সাঈদ বিন সাদের দেয়া বয়ানের অনুবাদ করবেন মুফতি আজিমুদ্দিন ও বাদ মাগরিব মাওলানা ইউসুফ বিন সাদের বয়ানের তরজমা করবেন মুফতি বিন কাশিম।
লাখো মুসুল্লির সাথে জুমার নামাজে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ময়মসিংহ-১১ গফরগাও এর সংসদ সদস্য কাজিমউদ্দিন ধনু, জিএমপি কমিশনার মেল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন,গাজীপুর জেলা প্রসাশক আনিসুর রহমান প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকাণ্ড সমন্বয় করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইজতেমা উপলক্ষে ১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করছে। ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত কামরার পাশে বিদেশি মেহমানদের রান্নার জন্য ১৪০ থেকে ১৫০ পিএসআই উচ্চচাপ সম্পন্ন গ্যাসের লাইন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের পারাপারের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা টঙ্গী-কামারপাড়া ব্রিজ থেকে আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গী সংযোগ ব্রিজ পর্যন্ত তুরাগ নদে পাঁচটি ভাসমান পন্টুন সেতু তৈরি করেছেন।
জিএমপি কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ইজতেমার নিরাপত্তায় ১০ হাজার পুলিশ কাজ করছে। পুলিশ ও র্যা বের কন্ট্রোল রুম থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ৩ শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, ওয়াচ টা্ওয়ার, ছাদের উপর থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকেই দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় পুলিশ, র্যা ব, কিউআরটি, আনসারসহ সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী রবিবার মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। অংশ নেওয়া মুসুল্লি ছাড়াও অসংখ্য মুসল্লি আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে এখানে আসবেন। এজন্য শনিবার মধ্যরাত হতে টঙ্গী ব্রিজ, কামারপাড়া ব্রিজ, ভোগড়া বাইপাস, মীরেরবাজার এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে ইজতেমা সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। ইজতেমা শেষে যাওয়ার সময় একই ব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকবে। আমরা নাগরিকদের কাছে আশা করব তারা যেন সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য। রাস্তায় যে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে তাদের সহযোগিতা করবে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ জানান, ইজতেমায় আগত দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে তোরণ, নিরাপত্তার জন্য র্যা ব ও পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার, ৩১টি শৌচাগার আট হাজার ৮৮৪টি টয়লেট ও ২৯৪টি গোসলখানা নির্মাণ করা হয়েছে। ফগার মেশিনের মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম গ্রহণ, ইজতেমা কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহসহ ইজতেমা চলাকালে গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়েছে। ময়দানে আগত মুসল্লিদের ওজু গোসলসহ অন্যান্য কাজে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয়। সেজন্য পূর্বের স্থাপন করা ১৪টি গভীর নলকূপের পাশাপাশি এবার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ময়দানে নতুন করে ১ হাজার ফুট গভীর ২টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
ইজতেমার ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে বরাবরের মতোই মোট ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে করে একটি গ্রিড অকেজো হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত না হয়। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫ টি ১১কেভি ফিডার লাইন ও ১৯ টি বিতরণ কেন্দ্র করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত পৌঁনে চারটার দিকে ঢাকা জেলার সাভার থানার শিমুলতলা গ্রামের মৃত আব্দুুল আলী রানা ছেলে মফিজুল ইসলাম(৭৫)। বার্ধক্য জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার ফজরের নামাজ শেষে ময়দানে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
১৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হয় তাবলীগ জামাতের জোবায়ের পন্থি অংশের প্রথম পর্ব। শুক্রবার শুরু হয়ে আগামী রোববার সাদপন্থিদের দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।