গণবাণী ডট কম
গাজীপুর মহানগরীর পুবাইল এলাকায় ছয় বছর বয়সী শিশু সিহাবকে হত্যার ১৬ মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনিভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনার গ্রেফতার আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিতে ঘটনা প্রকাশ পায়।
নিহত সিহাব হোসেন (৬) গাজীপুর মহানগরীর পুবাইল থানাধীন মাজুখান উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা জুয়েলের ছেলে।
গ্রেফতার আসামীর নাম নাসির মিয়া (২৮)। তিনি নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার সোনাপুর জমিদার হাট গ্রামের পাকমুন্সীহাট এলাকার মো. কামাল মিয়ার ছেলে। তিনি গাজীপুরের মহানগরের পুবাইল থানার মাজুখানবাগের টেক এলাকার মো. সাঈদ আহমেদের বাড়িতে ভাড়া থাকতো।
শুক্রবার বিকালে এ তথ্য জানিয়েছেন, পিবিআই, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম।
তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে দুপুরে নিখোঁজ হয় সিহাব। বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি পরিবার। নিখোঁজের পরদিন বাড়ির অদূরে মাজুখান গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকা থেকে সিহাবের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর তাজউদ্দীন আহমেদ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। পরে এঘটনায় সিহাবের নানী নাছিমা বেগম বাদী অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে পূবাইল থানায় মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ দীর্ঘ সময় তদন্তের পরও কোন কিনারা করতে না পারায় মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। পিবিআই তদন্তকালে শিশু সিহাব হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. নাসির মিয়া নামে এক যুবককে ১৯ জানুয়ারি গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর একইদিন নাসির এ ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
তিনি আরো জানান, জবানবন্দিতে নাসির স্বীকার করেছে, নাসির গাজীপুর মহানগরীর মাজুখান উত্তরপাড়ায় মো. ফারুকের মুরগীর দোকানের কর্মচারি ছিল। দোকানের ফিড খেয়ে ফেলার সময় মুরগী তাড়ানোর জন্য নাসির খেলনা পিস্তল দিয়ে মুরগি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তেন। পাশের গলির জুয়েলের শিশু ছেলে সিহাব মাঝে মধ্যে তাঁর কাছে দোকানে আসতো এবং খেলনা পিস্তলের ছোড়া গুলি ভিকটিম সিহাব কুড়িয়ে আনতো। নাসির মাঝে মধ্যে সিহাবকে চিপস্ কিনে দিতেন। ভিকটিম সিহাব নাসিরকে মুরগি চাচ্চু বলে ডাকতো। এভাবে ভিকটিম সিহাবের সাথে নাসিরের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
গত বছরের ২৫ নভেম্বর দুপুরে নাসির বাসায় নিজ কক্ষে ল্যাপটপে অশ্লীল দেখছিলেন। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। এসময় শিশু সিহাব নাসিরের রুমে যায়। তখন নাসিরের মাথায় বিকৃত চিন্তা আসে এবং সিহাবকে পাশবিক নিযাতন (বলৎকার) করতে চাইলে সিহাব চিৎকার দেয়। এসময় নাসির মুখ চেপে ধরলে ভিকটিম শিশু সিহাব স্বাসরোধ হয়ে মারা যায়। পরে সিহাবের মৃতদেহ খাটের নিচে রেখে দরজা লাগিয়ে নাসির বাইরে চলে যায়। পরবর্তীতে ভোর রাতে ভিকটিম সিহাবের মৃতদেহ সালাম মুন্সীর বাড়ির পাশে ফেলে রাখে। ঘটনার তিন দিন পরে নাসির এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে যায়। দুই দিন পরে চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসে নাসির। এর এক সপ্তাহ পর নাসির ৪০ দিনের জন্য চিল্লায় চলে যায়।
গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নাসির মিয়া শিশু সিহাব হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।