গণবাণী ডট কম:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করার কারণে দল থেকে বহিস্কারের পর ক্ষমা চেয়ে শর্ত সাপেক্ষে ক্ষমা পেয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মো: জাহাঙ্গীর আলম।
শর্ত সাপেক্ষে এক বছর দুই মাস ৩ দিনের মাথায় আবারো দলে ফিরিয়ে নেয়ার চিঠি পেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম । শনিবার রাতে তিনি সাংবাদিকদের কাছে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরিত চিঠিটি শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা তথা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার জন্য এর আগে আপনাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার/অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
আপনার বিরুদ্ধে আনিত সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ স্বীকার করে আপনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
এ অবস্থায়, গত ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১৭(৬) এবং ৪৭(২) ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করে আপনার প্রেরিত লিখিত আবেদন পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে আপনার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করা হলো।
ভবিষ্যতে কোনো প্রকার সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে, তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় কমিটির সভায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে অব্যাহতিপ্রাপ্তদের ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক দলের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠিতে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওদে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করেন। এ ঘটনায় ওই বছরের ১৯ নভেম্বর তাকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্টাদক ও দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বেশকিছু বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ২৫ নভেম্বর তাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে।
এ বিষয়ে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সংবাদিকদের বলেন, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমি যেন গাজীপুরবাসীর স্বপ্নপূরণে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও কাজ করতে পারি সেজন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি। নগরবাসীর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার স্বপ্নপূরণে কাজ করতে আমি অঙ্গীকারাবদ্ধ।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট মনির হোসেন বলেন, আজকে চিঠি এসেছে এটি নতুন কিছু নয় আমরা অনেক আগে থেকেই জানি জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা প্রদর্শন করে দলে ফেরত নেওয়া হয়েছে। এটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়া বা বেশি আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই তিনি দলে ফিরেছেন এটিই বড় কথা।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল বলেন আমিও এ ধরনের কোন চিঠি এখনো পাইনি। কেন্দ্র যেটি ভালো মনে করেছে সেটি করেছে। তিনি আগে আমাদের সহকর্মী ছিলেন আবার সহকর্মী হবেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত আমরা মেনে চলবো এখন তাকে স্বাগত না জানিয়ে আর কোন উপায় নেই।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান বলেন, এ ধরণের কোন চিঠি আমি এখনো পাইনি। চিঠির বিষয়বস্তু অবহিত করার পর তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাহাঙ্গীর আলমকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তির কারণে বহিষ্কার করা হয়েছিল, আবার কেন্দ্রে তাকে ক্ষমা প্রদর্শন করেছে। এ বিষয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যেটি ভালো মনে করেছেন তারা সেটি করেছেন। আমরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করব।