গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রোববার সকাল ৮টায় ট্রাক চাপায় একটি কারখানার এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করে ও আশপাশের অর্ধশতাধীক যানবাহন ভাংচুর করে।
একই সময়ে গাজীপুর মহানগরীর দেশীপাড়া এলাকায় ছুটি সংক্রান্ত দাবী নিয়ে মতদ্বৈততার কারণে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কারখানা বন্ধের ঘোষণায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। উভয় ঘটনার পর মহাসড়কে প্রায় ৪ ঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবী মেনে নিলে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে।
কালিয়াকৈরের ঘটনায় নিহত নিরাপত্তাকর্মীর নাম আজাদুল হক (৪০)। তিনি গাইবন্ধার গবিন্দগঞ্জ উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের আরব আলীর ছেলে। তিনি চন্দ্রা এলাকার মাহমুদ জিন্স নামের একটি পোষাক তৈরি কারখানার নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন।
কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় রোববার সকাল ৮ টার দিকে কারখানার শ্রমিকরা নিজ নিজ কারখানায় কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। এসময় দ্রুতগতীর একটি ট্রাক ঐ এলাকায় সড়ক পারাপাররত নিরাপত্তাকর্মী আজাদুল হকসহ কয়েকজন শ্রমিককে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই আজাদুলের মৃত্যু হয়। এতে আহত হয়েছেন আরো তিন শ্রমিক। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনার পর উত্তেজিত শ্রমিকরা ঘাতক ট্রাকটি আটক করে তাতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এসময়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা মহাসড়কে যানজটে আটকে থাকা অর্ধশতাধীক যানবাহন ভাংচুর করে। ঘটনার পর থেকে প্রায় দেড়ঘন্টা ধরে মহাসড়কে অবরোধ থাকায় উভয় দিকে প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়, শতশত গাড়ি আটকা পড়ে। আশপাশের লোকজন ট্রাকের আগুনি নিয়ন্ত্রণ করে।
পরে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ দেলোয়ার হোসেন, হাইওয়ে পুলিশের সিনিয়র এএসপি মো: নুরুল ইসলাম ও স্থানীয় পৌর মেয়র মো: মজিবুল হক শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করেন। এসময় আগামী ২-১ দিনের মধ্যে উক্ত মহাসড়কে রাস্তা পারাপারের জন্য একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ফ্যাক্টরির পক্ষ হতে ৪ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়া হবে। পাশাপাশি ঘটনাস্থল সংলগ্ন ৪টি ফ্যাক্টরিতে রোববার এবং আগামীকাল ২ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।পরে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিয়ে ১২টার িদিকে সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
অপরদিকে, গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন দেশী পাড়া এলাকায় ইমন ফ্যাশন লিঃ কারখানায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারা বিভিন্ন ছুটি ও অর্জিত ছুটিসহ ৮ দফা দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সাথে কিছুদিন ধরে আলোচনা করে আসছেন। কিন্তু মালিকপক্ষের সাথে কোন সমঝোতা হচ্ছিল না। রোববার সকাল ৮টার দিকে অন্যান্য দিনের মতো কারখানায় কাজে যোগদিতে আসে। এসে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে তারা দেখতে পান শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারা মোতাবেক অদ্য ২২ জানুয়ারি হতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারখানা বন্ধের ঘোষণা সংক্রান্ত নোটিশ ঝুলছে। উক্ত নোটিশ দেখে শ্রমিকরা কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে প্রথমে কারখানার সামনের দেশীপাড়া-জয়দেবপুর ফিডার রোড অবরোধ করেন। পরে ৯টার দিকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করতে করতে জয়দেবপুরে-শিববাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কে এসে সড়ক অবরোধ করেন।
পরে জিএমপির এসি রিপন চন্দ্র, সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম, কলকারখানা পরিদর্শক রোমেনুল ইসলাম, শিল্প পুলিশের এএসপি জাহিদ হোসেন এবং জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াসিমুজ্জামান চৌধুরী মালিকপক্ষ ও শ্রমিক পক্ষ নিয়ে আলোচনা করেন। মালিক পক্ষ শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক পক্ষের ৮ দফা দাবি মেনে নেয় এবং সোমবার থেকে পুনরায় কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়। শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবে।
মন্তব্য