গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র আয়োজনে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গাজীপুর মহানগরীর বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে দুদক এ গণশুনানীর আয়োজন করে। দুদক‘র সচিব মো. মাহবুব হোসেন এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।
সোমবার সকাল ১০টায় শুরু হয়ে টানা বিকাল ৩টা পর্যন্ত গণশুনানী চলে। শুনানীতে ২৩টি সরকারি বিভাগের বিভাগের বিরুদ্ধে ১৬৪টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়। গণশুনানী উপলক্ষে দুদকের পক্ষে প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ৮৬ জন নাগরিক নির্ধিারিত ফরমে লিখিত আকারে এসব অভিযোগ করেন। গণশুনানীতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভূমি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, দলিল নিবন্ধন, শিক্ষা, রেলওয়ে, সিটি করপোরেশন,পাসপোর্ট, পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদ, বন বিভাগ, তিতাস গ্যাস, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের সেবাগ্রহীতাগণ তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। তবে অভিযোগগুলোর মধ্যে ভূমি সংক্রান্ত ২৪টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়।
গণশুনানীতে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সঞ্চালনার দায়িত্বপালন করেন। গণশুনানীর মুল প্রতিপাদ্য ছিল রুখবো দুর্নীতি গড়বো দেশ, হবে সোনার বাংলাদেশ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুদকের পরিচালক মোরশেদ আলম । আরো বক্তব্য রাখেন দুদক সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন, দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল ইসলাম, জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মোঃ শামসুর রহমান,গাজীপুর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এম এ বারি।
মুল মঞ্চে অতিথিদের ডানপাশে অভিযোগকারীগণ উপস্থিত হয়ে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। পরে মঞ্চের বামপাশে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত হয়ে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে দুদক সচিব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগগুলে শুনে দ্রুত সমাধানের নির্দেশ প্রদান করেন।
শুনানীতে অংশ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন তিনি অভিযোগ করেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কোন মূল্যায়ন পাননি। হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা করেছেন টাকা দিয়ে, হাসপাতাল থেকে কোন ঔষধ বিনামূল্যে পাননি।
বক্তব্যের মাঝখানে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে থামানোর জন্য দুদক সচিব চেষ্টা করলে তিনি বলেন, রাখেন আমি বইলা লই, তারপরে তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরতে থাকেন। এসময় হাসপাতালে দালালদের ও আনসারদের দৌরাত্মসহ বিভিন্ন বিষয় ওঠে আসে।
তাঁর অভিযোগের জবাব দেন তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: তপন কান্তি সরকার। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তাঁর হাসপাতালে এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। পরে দুদক সচিব সমাজসেবা বিভাগের উপ পরিচালককে ঔষধ সরবরাহ করার দায়িত্ব দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন। তবে, দুদক সচিবের দেয়া সমাধানে ওই মুক্তিযোদ্ধা সন্তুষ্ট হতে পারেননি তিনি আরো কথা বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়।
গাজীপুর মহানগরীর হাড়িনাল লাকার রফিক অভিযোগ করেন, তিনি তার নিজের জায়গা খারিজের জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু সংশ্লিস্ট বিভাগের কর্মকর্তাগণ জোত এ জায়গা থাকার পরেও জয়গা নেই এমন অজুহাতে খারিজ না দিয়ে হয়রানি করছে।
শুনানীতে অংশ নিয়ে মো: শহীদুল্লাহ,জাহাঙ্গীর আলমসহ আরো অনেকে ভুমি অফিসে নানা অনিয়ম ও হয়রানি নিয়ে অভিযোগ করেন। মহানগরীর ভোগড়া এলাকার মতিউর রহমান জানান, তিনি জমি খারিজের আবেদন করার জন্য ১৮০০ টাকা এবং আবেদন খুজে বের করার জন্য ৬০০ টাকা
তহশিল অফিসের সহকারীকে দিয়েছেন। পরে তহশিলদার খরিজের আরো ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু তিনি টাকা প্রদান না করায় তার আবেদনটি বাতিল করা হয়। পরে দালাল জাহাঙ্গীর আলমের মাধ্যমে পুনরায় আবেদন করলে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে আবেদনটি নিস্পত্তি হয়।
পরে এসব বিষয় নিয়ে গাজীপুর সদর ও টঙ্গী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এসময় গাজীপুরের জেলা প্রশাসককে বলতে শুনা যায়, ভুমি নিয়ে ২৪টি অভিযোগ এসেছে। মনে হয় আমি ব্যর্থ। এসময় তিনি সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীদের সরাসরি তাঁর সাথে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন। পরে দুদক সচিব বিষয়গুলো শুনে দ্রুত সমাধানের নির্দেশনা প্রদান করেন।
গণশুনানিতে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন হলেও এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জবাব দেওয়ার জন্য কেউ সেখানে উপস্থিত হয়নি।
বাড়িয়া ইউনিয়নের নীল কমল অভিযোগ করেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য মর্জিনা বেগম তার নিকট থেকে বয়স্ক ভাতার জন্য ২৫০০ টাকা নিয়েছে। এ সময় সেখানে উপস্থিত মর্জিনা অস্বীকার করেন। পরে দুদক সচিব বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ প্রদান করেন।
শুনানীতে অংশ নেয়া মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, দুদক সচিব আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। আমি আশ্বস্ত হয়েছি। যদি ওনার কথা মত ব্যব্স্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে আমি খুবই খুশি হবো।
শুনানীতে অংশ নেয়া জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি আমার অভিযোগ জানিয়েছি। পরে আমাকে আবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আমি তো আমার সমস্যার কোন সমাধান এখনো পাইনি। সমাধান পেলে আমি সন্তোষ্ট হতে পারব। সমাধান না পেলে গণশুনানীতে অংশ নিয়ে লাভ।
গণশুনানী শেষে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক’র সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেন, গণশুনানীতে ১৬৪টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। দুদকের আওতাধীন ১১টি আমলযোগ্য বিষয়ের মধ্যে ৬টি প্রতিরোধযোগ্য এবং বাকিগুলো প্রতিকারযোগ্য। প্রতিরোধযোগ্য বিষয়গুলো আমরা শোনে তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী বিভাগের জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা বা নির্দিষ্ট কর্মকর্তাকে সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছি। প্রতিকারযোগ্য বিষয়গুলো দুদক অনুসন্ধানের জন্য নোট নেওয়া হয়েছে। তবে, প্রতিরোধযোগ্য বিষয়গুলোও আমরা ওয়াচে রাখব। সন্তোষজনক সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে দুদকের হস্তক্ষেপে তা নিষ্পত্তি করা হবে।