গণবাণী ডট কম:
মঙ্গলবার রাত ৯টা। শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাজীপুর মহানগরীর টেকনগপাড়া এলাকায় এসএস পেট্রোল পাম্পের সামনে দাড়িয়ে সামান্য পোশাক পড়ে ১০ বছর বয়সী একটি কন্যা শিশু কাঁদছিল। এসময় ঐ এলাকায় টহল ডিউটিতে ছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ার জাহান। বিষয়টি তার নজরে আসে। তিনি শিশুটির কাছে যান। শিশুটি তার পা জড়িয়ে ধরে আরো বেশী কান্নাকাটি শুরু করে। এসময় কি হয়েছে? কেন কাঁদছ? কোথায় থাক? শিশুটি কোন উত্তর দিতে পারছিল না, শুধু কাদছিল। পরে তিনি শিশুটিকে থানায় নিয়ে যান।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ার জাহান জানান, শিশুটিকে থানায় এনে গরম কাপর দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সে একটু স্বাভাবিক হলে সে শুধু নিজের নাম ফাতেমা, উত্তরায় থাকি, বাড়ী বেলকুচি এটুকু বলতে পারে। পরে তৎক্ষণাত রাজধানীর উত্তরা থানায় যোগাযোগ করি, সেখানে কোন নিখোঁজ জিডি হয়েছে কি না জানতে চাই। সেখানে কোন জিডির সন্ধান না পাওয়ায় সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানায় যোগাযোগ করি। থানা থেকে বেলকুচি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং তার কাছ থেকে স্থানীয় মেম্বারের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করা হয়। পরে ঐ মেম্বারের মাধ্যমে ফাতেমার পিতা মাতার সাথে সন্ধান পাওয়া সম্ভব হয়।
তিনি জানান, শিশুর নাম ফাতেমা। সে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার আজগড়া এলাকার আব্দুল কাদেরের কন্যা। পরে ফাতেমার ঘটনা তাদের জানিয়ে মেয়েকে নিতে থানার আসার জন্য তাদের বলা হয়।
শিশুটির পিতা আব্দুল কাদেরের বরাত দিয়ে ঐ পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, তার ৫টি ছেলে মেয়ে। সংসারে অভাব অনটন থাকায় তিনি শিশুটিকে উত্তরার একটি বাসায় গৃহপরিচালিকা হিসাবে দেন। সেখান থেকে শিশুটি গত মঙ্গলবার সন্ধার পরে কোন এক সময় কাউকে কিছু না জানিয়ে বের হয়ে পড়ে। পরে শিশুটি বাসে চড়ে গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর চৌরাস্তায় এসে নামে। পরে সেখান থেকে হাটতে হাটতে সে চলে যায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টেক নগরপাড়া এলাকায়। রাত বেশী হওয়ায় কোথায় যাবে, কি করবে কিছু বুঝতে না পেরে হয়ত ভয় পেয়ে কান্না করছিল।
তিনি জানান, বুধবার দুপুরে শিশুটির পিতা ও মাতা থানায় আসে। পরে আইনী প্রক্রিয়া শেষে দুইটার দিকে আমরা শিশুটিকে তাদের নিকট হস্তান্তর করি। শিশুটি তার পিতা-মাতাকে পেয়ে আনন্দিত হয় এবং তার মা-বাবা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।