গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন থানায় গ্রেফতার আসামীকে স্বজনদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়ার পর বাড়ী ফেরার পথে আসামী মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি পাওয়া গেছে। একারণে বাসন থানার দুই সহকারী উপ পুলিশ পরিদর্শককে (এএসআই ) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারী) দুপুর দুইটায় নিজ কার্যালয়ের সভাকক্ষে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই এএসআই হলেন, মাহবুবুর রহমান ও নুরুল ইসলাম। এছাড়া প্রত্যাহার হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন মালেক খসরু খান।
প্রসঙ্গত, অনলাইনে বিট কয়েন দিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগে গত ১৭ জানুয়ারি রাতে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা পুলিশ রবিউল ইসলাম (৪০) কে আটক করে। পরে রাতেই তাঁকে স্বজনের জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু বাড়ী ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আহত হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
কিন্তু, পরদিন সকালে স্থানীয়রা রবিউলকে ১৫ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে পরদিন ১৮ জানুয়ারি সকালে মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, ভাঙচুর, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটায়।
এঘটনা তদন্তে জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো: দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার খায়রুল ইসলাম।
মৃত্যুবরণকারী রবিউল ইসলাম গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা বাইপাস পেয়ারা বাগান এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে সুতার ব্যবসা করতেন। তিনি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার শাহজাদপুর গ্রামের আব্দুল বাকীর ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে জিএমপি কমিশনার বলেন, থানা হেফাজতে ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মৃত্যু হয়নি। এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তদন্ত কমিটি নিহত রবিউলের পরিবারের সদস্য, তার বাসার আশপাশের মানুষজন এবং এর সাথে যুক্ত অযুক্ত ৮৭ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তবে তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলেছেন রবিউলকে পুলিশ তার মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই গ্রেফতার করেছিল।
তিনি আরো বলেন, রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার, রাতে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া, ছেড়ে দেওয়ার সময় তাকে পুলিশের উচিত ছিলো সাথে গিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া, কিন্তু তা করা হয়নি। থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে না জানানো, থানার সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল হওয়াসহ প্রভৃতি বিষয়ে আমাদের মনে হয়েছে, পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, বাসন থানায় সিসিটিভি’র মনিটরিং ছিল। ঘটনার কয়েকদিন আগে কেন সিসিটিভি অকার্যকর ছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারেন। আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার কার্যক্রম শক্তিশালী করার জন্য জিএমপি হেডকোয়ার্টার থেকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। এতে কে বা কারা ক্যামেরা বন্ধ বা ক্ষতিসাধন করছে অথবা বন্ধ করে রাখছে তা ধরা পড়বে। তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে যেসব বিষয় হাতে পেয়েছেন তারই আলোকে বাসন থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক খসরুর ব্যাপারে মহাপুলিশ পরিদর্শককে (আইজিপি) সুপারিশ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি, অধিক মেয়াদে তদন্ত করা হচ্ছে। কিছু বিষয় তদন্তে বেরিয়ে আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তাছাড়া রবিউলকে জুয়া খেলার যে অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল সে অভিযোগটি সঠিক ছিল কি না তাও তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা ঘটনা প্রসেডিংয়ের জন্য একটা সুপারিশমালা তৈরী করেছি, যার ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) জিয়া ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মো: দেলোয়ার হোসেন,উপ পুলিশ কমিশনারগণসহয় অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।