গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করে টঙ্গী-জয়দেবপুর ১১ কিলোমিটার রেলপথে ডাবল লাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১ টায় গণভবন থেকে ভার্চূয়ালী যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের অপর দুটি প্রকল্পের সাথে যুগপৎভাবে ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের পর বাঁশি বাঁজিয়ে সবুজ পতাকা নেড়ে একই সঙ্গে তিনটি ট্রেনের যাত্রা শুরুর সংকেত দেন। তারপরেই নতুন নির্মিত ডাবল লাইন ধরে একটি ট্রেন জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী অন্য দুটি প্রকল্প রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত ঈশ্বরদী-রূপপুর এবং আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় কসবা-মন্দবাগ এবং শশীদল-রাজাপুর সেকশনের ডাবল লাইন ট্রেন চলাচলও উদ্বোধন করেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, পূর্বে টঙ্গী থেকে ঢাকার কমলাপুর পর্যন্ত ডাবল লাইন ছিল। জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত এ ডাবল লাইন উদ্বোধন করায় এখন জয়দেবপুর থেকে সরাসরি কমলাপুর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল সহজতর হলো। এতে রেল লাইন দিয়ে প্রতিটি ট্রেনের চলাচলের সময়সীমা অনেকটা হ্রাস পাবে।
এ উপলক্ষে গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার বিনয় জর্জ, রেলপথ মন্ত্রনালয়ের সচিব হুমায়ূন কবীর। এসময় গাজীপুর প্রান্তে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা এবং রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, দেশে লোকোমটিভ ও ওয়াগনের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে নতুন নতুন লোকোমটিভ ও ওয়াগন কেনা হচ্ছে। ট্রেন চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরাতন রেল লাইন, সিগন্যালিং ব্যবস্থার পরিবর্তন করে নিরাপদ আধুনিক ব্যবস্থার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রেল সেবার সুফল জনগনের দোরগোরায় পৌঁছে দেওয়ার সরকার দেশের সকল জেলাকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য নীতি গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য ত্রিশ বছর মেয়াদী একটি মাস্টারপ্ল্যাণ অনুমোদন করেছে। যা ইতোমধ্যে সময়োপযোগী হালনাগাদ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়েল যে অবকাঠামোর উন্নয়ন তা ২০০৯ সাল থেকে দেশে ৬৫০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ২৮০ কিলোমিটার মিটার গেজ রেল লাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ১২৯৭ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন ও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। ১২৬টি নতুন রেল স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২২৩টি স্টেশন ভবন নির্মাণি ও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বর্তমান সরকার আমলে রেলওয়ে মন্ত্রনালয়ের সময়ের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরেন।
এসময় মন্ত্রী বলেন, গাজীপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ছিল, ঢাকার সাথে গাজীপুরের একটি স্বতন্ত্র ট্রেন, ডেটিকেটেড ট্রেন সার্ভিস চালু করা। যেহেতু এখন ডাবল লাইন চালু হয়েছে, এখন এটা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করবো এটা দ্রুত করার জন্য।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন সেকশনে ৩৩ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার লুপলাইনসহ ১১৬ কিলোমিটার ও চারটি স্টেশন পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথমে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১১শ ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়া-আসায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ঢাকা-টঙ্গী ও টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশন। কিন্তু এই দুই সেকশনের মধ্যে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে দুটি ডুয়েলগেজ লাইন ও একটি ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে একটি ডুয়েলগেজ লাইন চালু রয়েছে। এ কারণে টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বেশি সংখ্যক ট্রেন পরিচালনা করা যাচ্ছিলো না। তাই ঢাকা থেকে আরও ট্রেন চলাচল বাড়ানো, ভ্রমণের সময় সাশ্রয়, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।