গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে মাদক সেবনে বাঁধা দেয়ায় ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি খুন হন ফার্ণিচারের দোকানের ম্যানেজার হাসান। আলোচিত এ হত্যাকান্ডের ৮ বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রহস্য উদঘাটন ও জড়িত ৩ মাদক সেবীকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতোরের পর আসামীরা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্ধি প্রদান করেছে।
নিহত হাসান (৪৫) পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি থানার সুটিয়াকাঠি গ্রামের মো: আউয়াল তালুকদারের ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন দত্তপাড়া এলাকায় হাজী মোঃ মাঈন উদ্দিন মিয়ার ফার্নিচারের কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন।
গ্রেফতার আসামীরা হলো, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন এরশাদ নগরের আলী আকবরের ছেলে মোঃ আজিজুল ইসলাম (২৮), দত্তপাড়া এলাকার মৃত আ: খালেকের ছেলে মোঃ হুমায়ন কবির @ রোমান (৪০) ও একই এলাকার মো: আ: হালিম চৌধুরীর ছেলে মোঃ জাফর ইকবাল (৪৩)।
গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বুধবার বিকালে এসব তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, মোঃ হাসান ৩/৪ বছর যাবৎ গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর দত্তপাড়ায় হাজী মোঃ মাঈন উদ্দিন মিয়ার ফার্নিচারে কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতো এবং কারখানার পাশের রুমে বসবাস করতো। ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে স্বজনরা হাসানের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে কারখানার মালিকসহ অন্যদের জানান। পরে তারা কারখানার তালা ভেঙ্গে হাসানের মৃতদেহ কারখানার ফ্লোরে দেখতে পায়। পরে পুলিশ এসে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। লাশের শরীরের বিভিন্ন অংশে নৃশংস আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ হাসানের ভাই মোঃ বাবু তালুকদার অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টংগী থানায় মামলা দায়ের করেন।
পরে থানা পুলিশ ৩ বছর ২ মাস ২০ দিন এবং সিআইডি ২ বছর ৪ মাস ৩ তিন মামলাটি তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। পরে বিজ্ঞ আদালত স্ব-প্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।
তদন্তকালে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামীদের গ্রেফতার করে। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্ধি দেয়।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিরা জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামি আজিজুল, হুমায়ুন কবির জাফর টংগীর বিভিন্ন স্থানে মাদক বিক্রি ও সেবন করতো। ৬/৭ জন সহযোগী নিয়ে আসামিরা কাঠের কারখানার ভেতরে মাদক সেবন করতে চায়।তখন তাদের নিষেধ করে। এ নিয়ে হাসানের সাথে আসামিদের তর্কাতর্কী হয়। ঘটনার দিন ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি আসামিরা জোরপূর্বক কারখানার দরজা খুলে দিতে ভিকটিমকে বাধ্য করে। পরে আসামিগণ কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে হাসানকে গালিগালাজ করে এবং মাদক সেবন করতে শুরু করে। তখন ভিকটিম হাসান মাদক সেবন নিষেধ করলে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাতাড়ি হাসানকে মারপিট করে। আসামিরা কারখানার ভেতরে থাকা স্ক্রু-ড্রাইভার, হাতুড়িসহ ফার্নিচার তৈরীর অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে হাসানের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। এতে নাকের মাথার অংশ, মুখের চোয়ালের নিচে অংশ কেটে যায়, মাংস খুলে যাওয়ায় মুখের দাঁত বের হয়ে যায় এবং বাম বুকে স্ক্রু ড্রাইভার দ্বারা বুকের ভেতর ঢুকানো কালো গেঞ্জি দ্বারা মোড়ানো ছিল এবং লিঙ্গ ও অন্ডকোষের বাম পাশের মাংস ছিল না। এতে হাসান অচেতন হয়ে পড়ে। আসামিগণ ভিকটিমকে কারখানার ভেতরে ফেলে রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে চলে যায়।