গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের চলমান অনুসন্ধান ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বুধবার দুপুরে এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে অনুসন্ধান শেষে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটিকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন শুনানিতে অংশ নেন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট টাইটাস হিল্লোল রেমা।
রিটকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না ও অ্যাডভোকেট ইকরামুল হক টুটুল। আর বহিস্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট সারোয়ার আহমেদ।
এর আগে মঙ্গলবার জাহাঙ্গীর আলমের দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গাজীপুরের স্থানীয় এক বাসিন্দার পক্ষে অ্যাডভোকেট একরামুল হক টুটুল হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠও আইনজীবী জেড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আর জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সারোয়ার হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জাহাঙ্গীর আলমের দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী একরামুল হক টুটুল। গাজীপুরের স্থানীয় এক বাসিন্দার পক্ষে তিনি এই রিট আবেদন করেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা ও গাজীপুর জেলার কয়েকজন নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন। তখন মহানগরীতে তাঁর বিচার দাবীতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। পরে গত বছরের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটুক্তির অপরাধে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ ও দলের প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়। পরে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডলকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর গাজীপুর মহাসগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এভোকেট আজত উল্লাহ খানকে পুনরায় সভাপতি ও আতাউল্লাহ মন্ডলকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
গত বছরের ২৫ নভেম্বর সিটি মেয়র পদ থেকে মো: জাহাঙ্গীর আলমকে বিভিন্ন অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সিটির প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিযুক্ত করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। অভিযোগসমূহ সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
একই তারিখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে। কমিটির সদস্যরা হলেন, কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন অনুবিভাগ) মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী, সদস্য যুগ্ম সচিব অনুপম বড়ুয়া ও উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।
এছাড়া জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েকশ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুর্ণীতি দমন কমিশন। এ জন্য দুদক দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটির সদস্যরা হলেন,দুদকের উপ-পরিচালক আলী আকবর ও দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান আশিক।
অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু ও ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা হয়। এসব মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করেন। এছাড়া, গত ২৩ আগস্ট জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদ ফিরে পেতে হাইকোর্টে একটি করলে মেয়র পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি হয়।
এমনি অবস্থায়, ১৭ ডিসেম্বর হঠাত জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে।
তারপর জাহাঙ্গীর পন্থিরা আরো বেশী উজ্জীবিত হয়ে ওঠেছেন। তারা অপেক্ষা করছিলেন, মন্ত্রণালয়ের আদেশের। আদেশ পেলেই মেয়র পদে বসবেন জাহাঙ্গীর।
তারই মধ্যে আজ উচ্চ আদালত জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ওঠা দূর্ণীতি তদন্ত শেষ করতে ৬ মাস সময় বেঁধে দিল।