গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরে চাকরী দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পরিচয়দানকারী এক প্রতারককে তার সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের লোগো, নিয়োগপত্র, সীলসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার তেলিরচালা এলাকার চৌরাস্তা/ চন্দ্রাগামী ওভার ব্রীজের পশ্চিমে রাস্তার সুবুজ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী এন্ড সার্ভিসিং সেন্টারের সামনে থেকে বৃহস্পাতিবার বিকেলে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ঘাগড়া বনিক পাড়া গ্রামের সমিত পালের ছেলে সুমন পাল (৪৭)। একই জেলার ও থানার আটিয়া গ্রামের মৃত সেলিম মিয়ার ছেলে মো: মুন্না (২২)।
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন জানান, গত ৮/৯ মাস পূর্বে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব পরিচয় দানকারী সুমন পালের সাথে মামলার বাদী ভিকটিম আরিফ সরকারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরে ওই প্রতারক জানায়, সে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে চাকুরী দিতে পারবে। এমন আশ্বাসের পর গ্রেফতারকৃত অপর আসামী মুন্নার প্রাইভেটকারে করে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর মৌচাক ও তেলিরচালা এলাকায় দেখা করে। ওই সময় প্রতারকরা জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকুরী প্রস্তুাব দেয় এবং বিনিময়ে তাদেরকে ২ লাখ ৮০ হাজার দিতে হবে বলে জানায়। ভিকটিম এত টাকা দিতে পারবে না বলে জানালে প্রতারক সুমন পাল তাকে বলে, টাকা একবারে দিতে হবে না। কয়েকবারে দিলেও হবে। এরপর গত প্রায় ২ মাস আগে প্রতারক সুমন পাল ভিকটিমের কাজ থেকে চাকুরী দেয়ার জন্য এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেটের ফটোকপি, এনআইডির ফটোকপি, ছবি এবং নগদ ৪০ হাজার টাকা নেয়। এসময় তাকে বলে কয়েকদিন পরে মেডিকেল পরীক্ষা করা করার সময় আরো টাকা দিতে হবে।
তিনি আরো জানান, পরে গত ৪ ফেব্রুয়ারী ভিকটিমকে ঢাকার ফার্মগেট এলাকার আল রাজি হাসপাতালে নিয়ে মেডিকেল পরীক্ষা করায় এবং আরো ৪০ হাজার টাকা নেয়। এরপর থেকে প্রতারক সুমন পাল জানায়, ভিকটিমের চাকুরী হয়েছে তাই আরো ২ লাখ টাকা দিতে হবে। ঐ টাকা দিলেই তাকে নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড দেয়া হবে। এছাড়া আরো অনেককে চাকুরী দেয়া হবে বলে লোকের ব্যবস্থা করতে বলে। একপর্যায়ে ভিকটিমের পরিচিত আঃ মালেক, মোঃ সজিব মিয়া, শাহীন আলমদের জানাইলে তাহারা একইভাবে প্রতারক সুমন পালের সাথে যোগাযোগ করে। পরে আঃ খালেকের কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার, সজিব মিয়ার কাছ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার এবং শাহীন আলমের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে মামলার বাদী আরিফ সরকারকে আরো ২লাখ টাকা দিয়ে নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড বুঝে নেয়ার জন্য বার বার চাপ দিতে থাকে। তাদের মধ্যে কয়েকজন চাকরীর জন্য কোন আবেদনও জমা দেয়নি। তাহলে চাকরী হয় কিভাবে? এ নিয়ে তাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তারা এ বিষয়ে কালিয়াকৈর থানায় মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে গাজীপুরের পুলিশ সুপার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রকিবুল ইসলাম জানান, বাদী পক্ষের সহযোগিতায় আসামীদের ১৬ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার বিকালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার তেলিরচালা চৌরাস্তা/চন্দ্রাগামী রাস্তার ওভার ব্রিজের দক্ষিণ পাশে সবুজ ট্রন্সপোর্ট এজেন্সী এন্ডৎ সার্ভিসিং সেন্টারে সামনে টাকা নিয়ে আসার জন্য বলে। সেখানে প্রতারকরা আসলে পুলিশ গিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতার করার সময় তাদের হেফাজত থেকে ২টি আইডি কার্ড, সাহার একটিতে নাম- MD. ARIF SARKAR, ID NO-164668 এবং অপরটিতে নাম- MD. SAJIB MIA ID NO-200012453 সহ ছবি জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের লোগো ও লেখা রয়েছে। ২টি নিয়োগপত্র যাহার ১টিতে লেখা আরিফ সরকার, পিতা- মোঃ মজিবুর রহমান এবং রোল নম্বর-১৬৪৬৬৮ এবং অপর ১টিতে নাম মোঃ সজিব মিয়া, পিতা- মোঃ শাহ আলম, রোল- নম্বর-২০০০১২৪৫৩ নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখা ও সরকারি সীল দেয়া রয়েছে। প্রতারক সুমন পালের তৈরী করা তার ছবি সহ উপ-সচিব, জ্বালানী মন্ত্রনালয় উল্লেখ করে SUMON PAL ID NO-1814290 জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের লোগে সহ আইডি কার্ডের রঙ্গিন ফটোকপি এবং প্রতারকদের ব্যবহৃত একটি সাদা রং এর এক্সিও প্রাইভেটকার, যাহার রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্রো-গ-২৮-৩১২৭ জব্দ করা হয়। জব্দকৃত মালামাল কালিয়াকৈর থানা হেফাজতে রয়েছে।
গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, গ্রেফতারের পর রিমান্ড আবেদনসহ বিকালেই আদালতের পাঠানো হলে বিজ্ঞ আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।