গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর গাছা এলাকায় পিতাকে অপমান করার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে গাজীপুর থেকে শিশুকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আসামিকে রোববার ভোরে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তার দেখানো মতে সিরাজগঞ্জ থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত শিশুর নাম তামজিদ (৯)। সে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন কুনিয়া পাছর এলাকার লতিফ সরকারের ছেলে।
গ্রেপ্তার আসামীর নাম, সোহাগ (৩৫)। তিনি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার তেপাড়িয়া গ্রামের মাখন মিয়ার ছেলে। তিনি হত্যার শিকার শিশু তামজিদের পিতার বাড়ির ভাড়াটিয়া।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) মাহবুব-উজ-জামান রোববার সন্ধ্যায় এসব তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, আসামী সোহাগ তার এক ভাই ও বোনকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর মহানগরীর গাছা থানাধীন কুনিয়া পাছর এলাকার লতিফ সরকারের বাসায় ভাড়া থাকে। সে কারখানায় চাকরী করে। অপরদিকে, লতিফ সরকারের স্ত্রী সুদে টাকা দেয়। লতিফ সরকারের স্ত্রীর কাছ থেকে সোহাগ ২০ হাজার তার বোন সুলতানা ১৬ হাজার টাকা সুদে নেয়। তারা টাকার সুদ ও বাসা ভাড়া সময় মতো পরিধোধ করতে না পারলে তাদেরকে বিভিন্ন সময় অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও অপমান করত। সোহাগের পিতা মাখন পুরান ঢাকায় বই বাঁধাইয়ের কাজ করেন। কয়েকদিন আগে সোহাগের পিতা তাদের এখানে বেড়াতে আসেন। তখন লতিফ সরকার ও তার স্ত্রী সোহাগের পিতাকে উল্লেখিত কারণে চরমভাবে অপমান করেন।
তিনি আরো জানান, সোহাগের পিতা চলে যাবারর পর প্রতিশোধ নিতে সোহাগ বাড়ী ওয়ালার শিশুপুত্র তামজিদকে গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের সহায়তায় গাছা থানাধীন কুনিয়া পাছর সাকিনস্থ লতিফ সরকারের বাড়ীর সামনে থেকে জোরপূর্বক অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় লতিফ সরকার ১১ মার্চ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলা দায়ের করার পরেই পুলিশ আসামী সোহাগের অবস্থান শনাক্ত করে। পরে অভিযান চালিয়ে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানাধীন তেপাড়িয়া এলাকা হতে রোববার ভোরে আসামি সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সোহাগের দেওয়া তথ্যমতে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালি থানাধীন চৌদরশি সাকিনস্থ পশ্চিম দিকে খাস কাউলিয়া মৌজার খাস জমির শস্যক্ষেতের পশ্চিমপাশে বালুর নিচ হতে শিশু তামজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব-উজ-জামান আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি সোহাগ অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, পিতাকে অপমান করার শোধ নেওয়ার জন্যই সে শিশুটিকে অপহরণ করে হত্যা করেছে।
সোহাগ পুলিশকে জানায়, শিশুটিকে অপহরণের পর সিএনজি করে গাজীপুর চৌরাস্তা, সেখান থেকে বাসে কালিয়াকৈর চন্দ্রা, চন্দ্রা থেকে বাসযোগে টাঙ্গাইল মির্জাপুর। এভাবে বিভিন্ন পরিবহণে করে সে শিশুটিকে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানাধীন ভেপাড়িয়া সাকিনস্থ আসামির নিজবাড়ীর উত্তর পাশে একটি নিচু জমির মধ্যে রাত্রে অবস্থাপন করে। পরের দিন অটোভ্যানযোগে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালি থানার পশ্চিম পাশে জনতা ঘাট, পরে নৌকা দিয়ে যমুনা নদী পার হয়ে নদীর পশ্চিম পাড়ে গিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালি থানাধীন চৌদ্দবশি সাকিন পশ্চিম দিকে খাস কাউলিয়া মৌজার খাস জমির শস্যক্ষেতের নিয়ে যায়। পরে সেখানে একহাত দিয়ে তামজিদের গলায় চেপে ধরে এবং অন্যহাত দিয়ে দুই হাত চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সে শিশুটির গলায় ধারালো চাকু দিয়ে গলায় ৩টি পোচ মারে। পরে শিশুর পরণের কাপড়-চোপড় খুলে উলঙ্গ করে মরদেহ বালুর নিচে চাঁপা দেয় এবং পরিধেয় কাপড়-চোপড় এবং জুতা সেখানে ফেলে রাখে।
পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, সোমবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।