গণবাণী ডট কম:
চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহির স্বামী গাজীপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ও আওয়ামীলীগ নেতা রকিব সরকারের একটি গাড়ির শো রুমে হামলার অভিযোগ ওঠেছে। শুক্রবার সকালে মাহির ফেসবুকপেজ থেকে লাইভে এ অভিযোগ করেন তার স্বামী।
এতে তিনি অভিযোগ করেন, গাজীপুর মহানগরীর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে সনিরাজ কার প্যালেস নামে তার একটি গাড়ির শো রুম রয়েছে। স্থানীয় ইসমাইল হোসেন ও মামুন সরকার তার লোকজন নিয়ে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। হামলাকারীরা তার শো রুমের গেইট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন আসবাবপত্র, দরজা জানালার কাঁচ এবং টেবিল চেয়ার ভাংচুর ও শোরুমের সাইনবোর্ড খুলে নেয়। দূর্বৃত্তরা তার অফিস কক্ষ তছনছ করে এবং টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রকিব সরকারের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে দূর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
অপরদিকে, শুক্রবার বিকালে ইসমাইল হোসেন এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন,ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উত্তর পাশে তার ও মামুন সরকারের মালিকানাধীন সাড়ে ৩২ শতাংশ জমি রয়েছে। চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির স্বামী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে গাজীপুর মহানগরীর বাসন মেট্রো থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাকিব সরকার প্রায় ৫ বছর ধরে জোরপুর্বক দখল করে সনিরাজ কার প্যালেস নামে একটি গাড়ীর শো রুম স্থাপন করেছে। শুক্রবার জমির মালিক মামুন সরকার জমিতে কাজ করতে গেলে রাকিব সরকার তার নিজস্ব বাহিনীর লোকজন দিয়ে জোরপূর্বক নির্মাণ সামগ্রীসহ লাখ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। ইসমাইল হোসেনের একটি রড বাইন্ডিং মেশিন ভেঙে ফেলে। এসময় তার লোকজন এসে ইসমাইল হোসেন ও তার লোকজনকে মারধোর করে। তিনিসহ আরো ৩ জন আহত হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার বাসন থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে জমি দখল, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজীসহ নানা অপকর্মের ফিরিস্তি লিখিত আকারে তুলে ধরেন। রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলাসহ আরো অভিযোগ রয়েছে বলে দাবী করেন ইসমাইল হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের জানান, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার প্রয়াত পরিবহন শ্রমিক নেতা সামসুদ্দিন সরকারের ছেলে রাকিব সরকার। তার বড় ভাই সুলতান সরকার গাজীপুর জেলা পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক, যিনি পরিবহন সেক্টরের বড় চাঁদাবাজ ও বিশৃংখলা সৃষ্টির মূল হোতা হিসেবে পরিচিত। তার আরেক ভাই গাজীপুর মহানগর শ্রমিক দলের আহবায়ক ও বিএনপি নেতা এবং স্থানীয় ১৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। রাকিব সরকার তার রাজনৈতিক পরিচয় ও ভাইদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রন, মাদকের স্পট পরিচালনা, জমি দখল, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রন করে স্থানীয় জনগনের কাছে এক আতঙ্কের নাম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সে এসব অপকর্মে তার দ্বিতীয় স্ত্রী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে ব্যবহার করছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, রাকিব সরকার ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের কাশেম টেক্সটাইল সংলগ্ন জনৈক বাবুলের প্রায় ১০০ শতাংশ জমি, বাসন থানার মোগড়খাল এলাকায় বিধবা রহিমার মালিকানাধীন ১০শতাংশ জমি, সদর থানার শিমুলতলী রোডে ১০ শতাংশ জমি জোড় করে দখল করে নেয়। সে বাসন থানার তেলিপাড়া এলাকার সরকার ক্যাবল ভিশন নামক ডিশ ব্যবসার ম্যানেজার আমির হামজা হত্যার প্রধান আসামী। তার বিরুদ্ধে ইনতুজা আক্তার রুপা নামে এক নারীকে জোর করে ধর্ষন করলে জয়দেবপুর থানায় মামলা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে ইসমাইল হোসেন জানান, রাকিব সরকারের এসব অপকর্মের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। উক্ত মন্ত্রীগণ লিখিতভাবে সুপারিশ করার পরও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি অবিলম্বে রাকিব সরকারের অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্য ও জোরপূর্বক দখল করা জায়গা ফিরে পেতে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে ফেসবুক লাইভে রাকিব সরকার অভিযোগ করেন, জিএমপি কমিশনার দেড় কোটি টাকা নিয়ে ইসমাইলের পক্ষে জমি দখল করে দিতে চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন, জমি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে রাকিব সরকার আমার নিকট এক কোটি টাকা দাবী করেছিল। যেখানে এক কোটি টাকা দিলে সমস্যা সমাধান হয়,সেখানে কেন আমি পুলিশকে দেড় কোটি টাকা দিব? তিনি আরো বলেন, পুলিশ আমার পক্ষে থাকলে আজকে আমি কেন মার খেলাম? বা কেন আমি মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে অভিযোগ দিলাম?
এ বিষয়ে জিএমপির বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ার জাহান জানান, ৯৯৯ এ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে হামলাকারীদের কাউকে পাওয়া যায়নি। রাকিব সরকারের ২০/২৫ জন লোককে দেখেছি। তিনি আরো বলেন, শোরুমের জায়গা নিয়ে মালিকানার দ্বন্দ্বে মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসব বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, চিত্র নায়িকা মাহী বা তার স্বামীর জমি জমা সংক্রান্ত কোন বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেননি। আজকে যাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদেরও আমি চিনি না। তারপরও কেন তিনি আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন, জানি না। তিনি বলেন, তারপরেও তিনি আমাদের কাছে আসলে যথাযথ আইনী সহযোগিতা করা হবে।
উল্লেখ্য, রকিব সরকার ও মাহিয়া মাহি পবিত্র ওমরা পালনের জন্য বর্তমানে সৌদিন আরব অবস্থান করছেন। রকিব সরকারের পারিবারিক সূত্র জানায়, শনিবার স্বস্ত্রীক দেশে ফিরবেন। শনিবার বিকালে রাকিব সরকার তার ঐ শোরুমে সাংবাদিক সম্মেলন আহবান করেছেন।