গণবাণী ডট কম:
সারাদিন ভিক্ষা করে, ফুটপাতে চা বিক্রি করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম শেষে রাতে একটু মাথা গোজার মতো ঠাঁই না পেয়ে রাস্তা কিংবা বস্তির খোলা আকাশের নিচে যে পরিবারগুলো নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছিল, সেই সব পরিবার এখন সরকারি টাকায় নির্মিত পাকা ঘরে বসবাসের সুযোগ পেয়ে আনন্দিত।
গাজীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় এমনি ভূমিহীন ও গৃহহীন ১ হাজার ৮১৭টি পরিবারকে ঘরসহ জমি প্রদান করার প্রকল্প শেষ হয়েছে। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৪৮৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে ঠাই পেয়েছেন। বাকী ১ হাজার ৩৩০টি পরিবারের হাতে আগামী ২২ মার্চ নিজ নিজ ঘরের চাবির তুলে দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে জেলার সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘরসহ জমি প্রদান সম্পন্ন হবে। ফলে গাজীপুর জেলা হবে শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের উপজেলা ট্রাস্ক ফোর্স কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলার সকল উপজেলাকে ভূমিহীন গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আর আলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২২ মার্চ গাজীপুর জেলাকে ভূমিহীন গৃহহীন মুক্ত জেলা হিসাবে ঘোষণা করবেন।
তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীর পিতার জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে বলেছিলেন, দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তারপর থেকেই সারাদেশের ন্যায় গাজীপুরে শুরু হয় গৃহহীন মানুষের জন্য সরকারী খরচে জমি ও বাড়ী উপহার দেয়ার মহতি উদ্যোগ। তার ঘোষণার সফল বাস্তবায়ন গাজীপুরে সম্পন্ন হয়েছে। অনিশ্চয়তার অমানিশা পার করে গাজীপুর জেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের স্বপ্নের ঠিকানায় ইতিমধ্যে ঠাঁই পেয়েছে ৪৮৭টি পরিবারের মানুষ। আরো ১৩৩০ জন প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে আগামী ২২ মার্চ নিজেদের ঠিকানায় ওঠবেন।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮১৭টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম পর্যায়ে নির্মাণ করা হয় ২৫০টি ঘর, দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ করা হয় ২০২টি ঘর এবং তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণ করা হয় ১৩৩০ টি ঘর। এসব ঘরের মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলায় ৬৩০টি, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৪৪০টি, শ্রীপুর উপজেলায় ২৮০টি, কাপাসিয়া উপজেলায় ৩১৮টি এবং কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৫৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ২ শতাংশ জমিসহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি পাকা টিনশেড ঘর উপহার পাচ্ছেন। ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘরগুলোরে প্রতিটিতে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট রয়েছে। যেখানে বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে। গৃহসহ জমি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে যৌথভাবে দলিল করে দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের ভিতরে যেন একটি ছোট গ্রাম। দুর থেকেই নজর কাড়ে। একসাথে অনেকগুলো একই আকার ও রংয়ের ঘর নির্মাণের ফলে সবুজের বুক চিড়ে ছোট ছোট আবাসন গুলো মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে। প্রকল্প এলাকায় প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো হচ্ছে। প্রতি ১০টি পরিবারের সুপেয় পানির জন্য দেওয়া হয়েছে একটি করে নলকূপ। আশ্রয়ণের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের শরীর গঠন ও বিনোদনের জন্য প্রকল্প এলাকায় রয়েছে খেলার মাঠ। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আধুনিক গ্রামের সব নাগরিক সুবিধাই রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে।
গাজীপুর মহানগরীর জরুন এলাকায় নিজের ঠিকানা পেয়েছেন নজরুল মন্ডল। তিনি চা বিক্রি করে অতিকষ্টে পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করতেন। ঘর পেয়ে তিনি খুব খুশী। এখন ঘর ভাড়া বাবদ তার কোন খরচ নেই। সংসারে সুখ শান্তি ফিরে এসেছে।
এখানেই ঘর পেয়েছেন জোবেদা বেগম। এক সময় তিনি ভিক্ষা করতেন। জীবিকার প্রয়োজনে পথে ঘাটে থাকতেন। থাকার কোন জায়গা ছিল না। ছিল না কোন ঠিকানা। তিনি শুধু ঘরই পাননি। ঠিকানাও পেয়েছেন। সরকারি টাকায় ঘর পেয়ে তিনি সন্তোষ্ট।
গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মুরাদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘গ্রাম হবে শহর‘ এই ঘোষণার একটি সফল উদাহরণ এই আশ্রয়ণ প্রকল্প। এর মাধ্যমে অসহায় দরিদ্র ও ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ আশ্রয় পেয়েছেন। পেয়েছেন বাঁচার প্রেরণা।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘর প্রদানের কর্মসূচি আমাদের বিরাট অর্জন। স্বাধীনতার এত বছর পর প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে আশ্রয়হীনদের মধ্যে ঘর বিতরণ করছি, এটা খুবই আনন্দের। এখানে বহু মানুষ তাদের স্বজনদের নিয়ে বসবাস করবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যারা আশ্রয় পেয়েছেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে দরিদ্রতার অভিশাপ থেকেও মুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হবেন।